আপনজন ডেস্ক: মেঘালয় সফরে গিয়ে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মেঘালয় ও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে অবহেলা করেছে। বঞ্চনা করছে। শিলংয়ে তৃণমূলের এক কর্মী সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, তার দল মেঘালয়ের মানুষকে সাহায্য করতে চায়, যাতে এই রাজ্য ভূমিপুত্রদের দ্বারা শাসিত হয়। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে মেঘালয়ের পরিবর্তন আনবে। আর তার ফলে পার্বত্য রাজ্যের উন্নতি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বলেন, মেঘালয়ের প্রতিটি পরিবারের মহিলাদের প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা করে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, মেঘালয়ের মহিলারা যথেষ্ট কষ্টে রয়েছেন। তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব বলে জানান মমতা। উল্লেখ্য, আগামী বছরের গোড়ার দিকে মেঘালয়ে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। এর আগে, গত মাসে অসম-মেঘালয় সীমান্তে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য করেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। এ নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘আজ আমি মুক্রোহের গুলিতে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের শোকের সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য ছিল। সাহায্যের একটি ছোট কাজ হিসাবে, আমি তাদের আত্মীয়দের হাতে ৫ লক্ষ টাকার অনুদানের চেক তুলে দিয়েছি। মমতা এদিন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার থাকা বিজেপির ধর্মীয় আগ্রাসনের নিন্দা করেন।
তবে, তৃণমূল যে বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা নিয়ে মমতা বলেন, অপপ্রচার করা হয় তৃণমূল একটি বাঙালি দল। তৃণমূল কংগ্রেস যদি বাংলা দল হয়, তা হলে বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জির লেখা জাতীয় গান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত কেন গাইবে মানুষ? স্থানীয়দের শিলং-এ ঠাকুরের সফরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান তৈরি করেছিলেন এবং মাদার তেরেসা যিনি কলকাতাকে তার আবাসস্থল বানিয়েছিলেন, তিনি কি কেবল বাংলার, ভারতের নয়? তিনি বলেন, আপনারা কেন জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করছেন? আসুন আমরা একসাথে হাঁটি, চিন্তা করি এবং কথা বলি। আমি একজন বাঙালি এবং আমি এটা নিয়ে গর্বিত। কিন্তু আমি সারা ভারতের জন্য কাজ করি। মমতা নিজেই জানান, তিনি এখানে এসেছিলেন যখন পিএ সাংমা (তৃণমূলের টিকিটে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাই মেঘালয়বাসীর প্রতি মমতার আহ্বান, আপনারা এবার টিএমসিকে ভোট দিন। কলকাতা থেকে মেঘালয়কে নিয়ন্ত্রণ করা নয়, আপনারাই শাসন করুন। কেবল আপনাকে পরামর্শ দেব এবং গাইড করব,” তিনি বলেন, “মেঘালয়কে দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যদি বিজেপি গুলি চালানোর মতো অবস্থায় থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ করিয়ে দেন যে কীভাবে টিএমসি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিভাজনমূলক পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করেছিল এবং আশা করেছিলেন যে মেঘালয়ের জনগণও একই কাজ করবে।
তিনি ২২ শে নভেম্বর আসাম-মেঘালয় সীমান্তের মুক্রোতে গুলি চালানোর ঘটনায় কনরাড কে সাংমা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, যাতে ছয়জন নিহত হয়েছিল। তিনি মেঘালয়ের পাঁচ জন নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করেছিলেন এবং প্রত্যেককে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।তাঁর ভাইপো ও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এনপিপি-র প্রধান সাংমা তাঁর মেরুদণ্ড এবং সমস্ত কিছু দিল্লিতে জমা করেছেন। সীমান্তে গুলি চালনার ঘটনায় রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মুক্রোহের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কোনও দলই তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি। একজন অপরাধীকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। এমনকি কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডাকা হয়নি,” বলেন তিনি। টিএমসি জুটি মেঘালয়ের সীমান্ত বিরোধের সমাধান খুঁজে বের করা এবং প্রতিটি পরিবারের একজন মহিলাকে মাসিক ১,০০০ আর্থিক সহায়তা প্রদান সহ বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গোয়ায় নিজের জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর, মেঘালয় টিএমসির “জাতীয় দল” স্বপ্নের চাবিকাঠি ধরে রেখেছে। ২০২১ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল এম সাংমার নেতৃত্বে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ক দলত্যাগ করলে টিএমসি রাতারাতি রাজ্যের বিরোধী দল হয়ে ওঠে। এই বিধায়কদের মধ্যে এক জন কয়েক সপ্তাহ আগেই দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।