সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা ঠুকেছেন। পঞ্চায়েত ভোট যাতে নির্বিঘ্নে হয় সেই আর্জি জানিয়ে। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন আবদার, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হোক এবং সেই ভোট হোক কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে। সোমবার মামলাটি দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। আগামিকাল থেকেই এই মামলার শুনানি শুরু হবে বলে জানাও গিয়েছে। কিন্তু এই মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই। প্রশ্ন তুলেছেন দলের আদি নেতা ও বসে যাওয়া কর্মীরা। প্রশ্ন এটাই, কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করানো হলেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? নাকি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির পর্যবেক্ষণ নিরপেক্ষ হবে! যে রাজ্যে দলের সংগঠন বলেই কিছু নেই সেখানে মামলার পর মামলা আর কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করানো হলেই কী বিজেপির জয়ের রাস্তা খুলে যাবে!রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই শুভেন্দুর হাঁকডাক বেড়ে চলেছে। তিনি নানান সময়ে অভিযোগ করেছেন যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘হিংসা’র মাধ্যমে জয়লাভ করতে চাইছে তৃণমূল। বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে, হিংসা করে ‘একপেশে ভাবে’ নির্বাচন করিয়ে সেই জয় পেতে চাইছে বাংলার শাসক দল। তবে শাসকদল ‘গায়ের জোরে’ পঞ্চায়েত দখল করতে চাইলে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, তা-ও হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এবং বঙ্গ বিজেপির অনান্য নেতানেত্রীরাও। এবার তিনি মামলা ঠুকেছেন কলকাতা হাইকোর্টে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় হাইকোর্ট যদি রাজ্য সরকার কিংবা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য না শুনেই রায় দেয় তাহলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে। আর যদি হাইকোর্ট রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতামত জানতে চায় তাহলে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ছবি তুলে ধরা হবে। কিভাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন সেই সময় একপেশে মনোভাব নিয়েছিল বা শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিনা কারণে গুলি চালিয়ে কীভাবে মানুষ খুন করেছিল সেই বিষয়টি তুলে ধরা হবে। মোট কথা শুভেন্দুকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না
।কিন্তু রাজ্যের এই অবস্থানের থেকেও এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শুভেন্দুর মামলা ঘিরে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই ওঠা প্রশ্ন। বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের হাল যে নিতান্তই খারাপ সেই সম্পর্কে রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার হাতে। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বার বার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বলে এসেছে যে বাংলায় নীচুতলায় দলের সংগঠন খুবই মজবুত। কিন্তু নাড্ডার কাছে সে রিপোর্ট পৌঁছেছে তাতে পরিষ্কার তুলে ধরা হয়েছে সেই দাবি কতটা মিথ্যা। বুথ স্তরে এই রাজ্যে বিজেপির না আছে কোনও সংগঠন, না আছে কোনও প্রভাব, না আছে সমর্থন। এই অবস্থায় শুভেন্দু মুখে যতই বড় বড় দাবি করুক না কেন বা আদালতে একের পর এক মামলা দায়ের করুক না কেন, ছবি যে বদলাছে না বা বদলাবে না সেটা এখন জোর গলাতেই দাবি করছেন বঙ্গ বিজেপির আদি নেতারা। তাতে সায় দিচ্ছেন দলের বসে যাওয়া কর্মীরাও। মামলার জেরে আদালত যে রায়ই দিক না কেন তাতে যে বিজেপির বিশেষ লাভ হবে না বরং দলের বেহাল দশা আরও প্রকট হবে সেটা জোর গলাতেই দাবি করছেন বঙ্গ বিজেপির নেতাদের একাংশই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct