শহর আলীর একদিন-প্রতিদিন
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
সময়টা এমন শহর আলী ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে ঠাহর করতে পারছে না। এমন সময় জোরসে একটা ধাক্কার সাথে বউ সখিনার বাজখাই গলা, এই যে আলসের হদ্দ তাড়াতাড়ি উঠেন.. বেলা কয়টা বাজে সে খবর আছে? শহর আলী জানে, তার বউ যখন বেশি রেগে যায়; তখন তুই তুকারি করে আর যখন অল্প রাগে তখন আপনি আপনি করে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে একবার দেয়াল ঘড়ির উপর চোখ বুলিয়ে এসে বলল, আর একটু ঘুমাই না; সবে তো মাত্র সোয়া ছয়টা বাজে। এবার আর সখিনা মেজাজ ঠিক রাখতে পারল না। বলল, তুই ঘুমিয়ে থাক নবাবজাদা। তুই কি জানিস না, সাতটায় মেয়ের স্কুল আর অফিসে যাওয়ার আগে এককাপ চা ছাড়া আমার চলে না। শহর আলী উত্তরে কিছুই বলল না। বলা চলে, বলার সাহস পেল না। নীরবে শয্যা ত্যাগ করে চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে গেল। সেই শহর আলী এখন ময়মনসিংহ শহরে থাকে। অথচ তার শহরে থাকার ইচ্ছা কোনোদিনই ছিল না। যদিও সে লেখাপড়া জানা মানুষ। তাও একেবারে কম লেখাপড়া নয়, গণিতে অনার্স-মাস্টার্স। তার উপর লেখালেখি করে। সেই সুবাদে গ্রামের কোনো হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে সারাটি জীবন কাটিয়ে দেওয়াই ছিল তার ঐকান্তিক ইচ্ছা। কিন্তু সেই ইচ্ছার তখনই গুড়েবালি হয়েছে, যখন শহর আলীর বেকার বউ একটা দামি চাকুরি পেয়ে যায়। তখন সে তার মনের গভীরে লুকায়িত সমস্ত ইচ্ছার মাথা মুড়িয়ে তিন সন্তান এবং একমাত্র বউকে সাথী করে শহরে পাড়ি জমায়। যে সে বউ নয়, বেশ কয়েক বছর চুটিয়ে প্রেমের পর দুই লক্ষ এক টাকা দেন মোহরে বিয়ে করা বউ! শহর আলী অনেকটা বৃক্ষের মতোন নরম প্রকৃতির মানুষ। তবে সে নিজেকে কখনও মানুষ বলে দাবি করে না। কেন জানি করতে পারে না। বড়জোর ৭% মানুষ ভাবে। এই ৭ কে যদি টেনেটুনে ১০% করতে পারতো, তাহলে আর তার জীবনে কোনো আফসোস থাকতো না। এইসব ভাবাভাবির মধ্যেই আবার সখিনার চড়া গলা ভেসে এলো, চা কি আজকে হবে নাকি অফিসে চলে যাব? শহর আলী অত্যন্ত নরম-শরম গলায় বলল, পানি ফুটতে শুরু করেছে; আর বেশিক্ষণ লাগবে না। সখিনা গলার ঝাঁজ আরও বাড়িয়ে বলল, তর চা তুই-ই খা। আজ অফিসে অনেক কাজ, আমি গেলাম। শহর থতথত খেয়ে বলল, এই যে হয়ে গেছে; আর একটা মিনিট.....। সখিনা কিছুই বলল না। হাই হিলের কড়া শব্দ বাতাসে ঝাড়তে ঝাড়তে বের হয়ে গেল। শহর আলীর খুব একটা মন খারাপ হলো না। সহ্য করতে করতে এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। তবুও এক চিমটি সমপরিমাণ একটা দীর্ঘশ্বাস বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে গেল। অথচ সেদিনের কথা। এই সখিনা তাকে এক নজর দেখার জন্য, কিছু কথা বলার জন্য, আঙুলের ভেতর আঙুল ঢুকানোর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো৷ তাকে ঘিরে ঠাঁই খুঁজতো। ফোন রিসিভ করতে একটু দেরি হলেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়ত। শহর আলী ভাবে, একি তার সেই সখিনা নাকি অন্য কেউ? এমন সময় শ্রুতির গলা শোনা গেল। বাবা, আমি রেডি। তাড়াতাড়ি চল। আজ মিস পনের মিনিট আগে যেতে বলেছে। শহর শ্রুতির মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, চল মা, আমিও রেডি। যেই বের হওয়ার জন্য দরজা খুলল, এমনি পেছন থেকে আদর এবং দ্যুতি একসাথে বলল, বাবা তাড়াতাড়ি এসো যেন। শহর আলী বলল, তোমরা রেডি হও। আমি শ্রুতিকে স্কুলে রেখে এখনই আসছি।
বাচ্চাদের স্কুলে রেখে শহর আলী আর বাসায় গেলো না। অবশ্য যেতে পারলে দুপুরের রান্নার কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখা যেতো। এই যেমন পেঁয়াজ কাটা, কাঁচা মরিচ-সবজি কাটা এবং মাছ- মাংস ফ্রিজ থেকে বের করে জলে ভিজিয়ে রাখা ইত্যাদি। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের রস-কষ বিহীন পাথর মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আর সাহস করল না। তার উপর যানজটের দুর্ভোগ তো আছেই। যাই হোক যথাসময়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করে যেই হাজিরা নেওয়া শুরু করল; তখনই মোবাইল বাজতে শুরু করল। শহর কিছুটা বিরক্তি নিয়েই ফোন হাতে নিল। সখিনা বলল, হ্যালো.. কি করছ? আমি এখন ক্লাসে। কিছু বলবে? হুম, বাচ্চাদের সময় মতো আনতে যেও, বাটা মশলা মনে হয় শেষ.. কিছু মশলা বাটাবাটি করো আর অনেকদিন শুটকি মাছ খাই না.. আজ শুটকি রান্না করো। শহর আলী বলল, আচ্ছা। সখিনা আবার বলল, আর একটি কথা, বাসার প্রত্যেকটি রুম যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। ময়লা আর অগোছালো থাকলে কিন্তু তোমার আজ খবর আছে... বলেই ফোন কেটে দিল। শহর আলীর ওজর-আপত্তির কোনো ধার ধারলো না। শহর আলী একটানা কয়েকটি ক্লাস নিলো। তবুও মন বাদ দিলে শরীরে তেমন একটা ক্লান্তি নেই। এজন্যই বোধ করি বলা হয়, শরীরের নাম মহাশয়, যা করাবেন তাই সয়। এখন বেলা একটা বাজে, দেড়টায় শ্রুতির ছুটি। তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে আসতেই তীরের মতোন কানে বিদ্ধ হল, শহর আলী সাহেব একটু বসেন। আপনার সাথে কিছু কথা আছে। শহর আলীর মাথায় যেন বজ্রপাত হল। তবুও অনুগত ছাত্রের মতোন প্রধান শিক্ষকের সামনের চেয়ারটায় এমনভাবে বসল, যাতে চেয়ারটিও টের না পায়। নজরুল ইসলাম পোড়খাওয়া মানুষ। রতন চিনতে ভুল করেন না। বললেন, আপনি ভালো গণিত পড়ান। আমার ছেলেটি এবার এস এস সি দেবে। ওকে কিছুদিন গণিত দেখান। শহর আলী তার ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কথা মুখের ভেতরে জাবর কাটলেও মুখের বাইরে বের করতে পারল না। জী স্যার বলে নাতিদীর্ঘ একটা সালাম জানিয়ে বিদায় নিল। হন্তদন্ত হয়ে শহর আলী যখন শ্রুতির স্কুলের সামনে গেল, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে নির্দেশনা মতো শ্রুতি প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অপেক্ষা করছে। স্কুল থেকে বাসা হাঁটা পথ। হাঁটতে হাঁটতে শ্রুতি বলল, বাবা তোমার কি মন খারাপ?
শহর আলী বলল, এসব কি বলছ মা, আমার মন খারাপ হবে কেন? শ্রুতি বলল, তুমি স্বীকার না করলেও আমি বুঝি বাবা। আম্মু সবসময় তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করে। আম্মু তো এমনই... তুমি মন খারাপ করো না বাবা..একরত্তি মেয়ের মুখে এমন পর্যবেক্ষণ দেখে শহর আলীর চোখে জল আসেনি, বরং যারপর নাই খুশিই হল। তাছাড়া শহর আলী জানে, সখিনা বাসায় এসে দারোগা দারোগা আচরণ করলেও বাইরে সবার সাথে অমায়িক ব্যবহার করে। যাক, তিন তলার সিঁড়ি ভাঙার সময় সখিনা আবারও ফোন দিয়ে বলল, রান্না শেষ হয়েছে? শহর আলী না নরম না গরম তেমনি নিরুত্তাপ স্বরে জবাব দিল, না। সিঁড়ি ভাঙছি। এখনই রান্না শুরু করব। সখিনা বলল, দুইটা বাজে এখনও রান্না করনি; বাচ্চারা কি রাতে খাবে? ও আর শোন, যেজন্য ফোন দিয়েছি..কুরিয়ার অফিসে একটা পার্সেল এসেছে, আজকেই নিয়ে এস। শহর আলী কোনো জবাব দিলো না। সখিনাও ঘ্যাচাং করে লাইন কেটে দিল। তারপর শ্রুতি বলল, আচ্ছা বাবা, বলতো দেখি ফুটবল বড় নাকি পৃথিবী বড়? শহর আলী বলল, খুব কঠিন প্রশ্ন মা। এর উত্তর আমার জানা নেই। তুমিই বল। শ্রুতি হাসতে হাসতে বলল, ফুটবল এবং পৃথিবী একদম সমান সমান বাবা। কারণ দুটোই ৩৬ ডিগ্রি। চমতকার এবং যথার্থ ব্যাখ্যা সহ জবাব শুনে শহর আলী হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, মা তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে নাও, আমি রান্না করি। রান্না শেষ করতে না করতেই সাড়ে তিনটা বাজলো। চারটায় আদর এবং দ্যুতির স্কুল ছুটি হয়। ওরা একই স্কুলে পড়ে। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে শ্রুতিকে বলল, মা তুমি খেয়ে নাও; আমি তোমার ভাইয়া এবং আপুকে নিয়ে আসি। শ্রুতি বলল, তুমি খাবে না বাবা? শহর আলী বলল, অনেক দেরি হয়ে যাবে মা... তুমি খেয়ে নাও। আমি বাসা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিচ্ছি। শ্রুতি বলল, বাবা আমিও তোমার সাথে যাব... বাসায় একা একা আমার ভয় লাগে। শ্রুতিকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে অবশেষে রাজি করানো গেল। দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে মেইন রাস্তায় আসতেই দেখে আদর এবং দ্যুতি রিকশা থেকে নামছে। শহর আলী বলল, কি ব্যাপার .. একা একা চলে আসলে কেন? আদর বলল, এক পিরিয়ড আগেই স্কুল ছুটি হয়ে গেছে বাবা। তাই চলে আসলাম। আমার কাছে রিকশা ভাড়া নেই। তুমি দিয়ে দাও। শহর আলী বলল, তোমরা চাবি নিয়ে বাসায় যাও... আমি একটু আসছি। ক্ষুধায় পেট সাগরের হাঙরের মতো লাফালাফি করছে। কিছু একটা খাওয়ান দরকার। তবে তারচেয়েও বেশি দরকার কুরিয়ার অফিস থেকে পার্সেলটা আনা। এর অন্যথা হলে আর রক্ষা থাকবে না। তার উপর পুরো শহরের যানজট গ্রীষ্মের খরতাপের মত অসহ্য হলেও সহ্য করতে হবে। যেমন শহর আলী এখন সহ্য করছে এই সংসারের ঘানি। টানতে যতই কষ্ট হোক, পালিয়ে যাওয়ার কোনো জো নেই। যাই হোক কুরিয়ার অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হল। সখিনা এখনো অফিস থেকে ফিরেনি। শ্রুতি, দ্যুতি এবং আদর তিনজনে টিভি দেখা নিয়ে ঝগড়া করছে। শ্রুতি কার্টুন দেখবে, দ্যুতি সিরিয়াল এবং আদর ক্রিকেট খেলা। শহর আলী বাসায় ঢুকতেই সবাই নালিশের স্তুপ উগড়ে দিচ্ছে। শহর আলী বলল, তোমাদের কারো কোনো দোষ নেই। সমস্ত দোষ আমার... এই শহর আলীর। সবার জন্য আলাদা আলাদা টিভি কিনতে পারলে হতো! এখন তোমরা সবাই যার যার রুমে যাও। সবকিছু গোছগাছ করে রাখ। তোমাদের আম্মু আসার সময় হয়েছে। সবাই যার যার মতো নিজ নিজ রুমে চলে গেল। সারাদিনের ক্লান্তিরা যেন শহর আলীর সমস্ত শরীর জুড়ে কোরাস গাইছে। কোনোরকমে হাত-মুখ ধুয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। দু’চোখ জুড়ে সাত রাজ্যের ঘুম। শহর ঘুমাতে চাইছে না; তবুও চোখ বুজে এলো। বিশাল হাঙ্গামার শব্দে শহরের ঘুম ভাঙলো। সখিনার ঝাঁঝালো কণ্ঠ তীরের ফলার মতো দু’কানে বিদ্ধ হচ্ছে। বাচ্চারা সবাই নীরব-নিস্তব্ধ। সখিনা গোষ্ঠীশুদ্ধ বকছে, আসলে তোদের জাতটাই খারাপ। নইলে এতো বকাবকির পরেও তোরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শিখলি না। তোদের বাপই আসল খারাপ। নিজেও কিছু করে না, বাচ্চাদেরকেও শেখায় না। ময়লার বালতিটা এখনও বাইরেই আছে, রান্নাঘরের অবস্থা দেখে আমার বমি আসছে, মশারিটা এখনো গোছানো হয়নি.... ইত্যাদি ইত্যাদি। শহর আলী কিছুই বলল না। মস্তবড় অপরাধীর মতো মাথা নিচু বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিতেই সখিনা বলল, সারাদিন খালি খাওয়া, ঘুম আর কবিতা লেখা। কবিতাই আপনাকে ভাত-কাপড় দিবে..আপনে এসব নিয়াই থাকেন... আমি আগামী মাস থেকে হোস্টেলে থাকব...। শহর আলী কিছুই বলল না। বোবার মতোন চুপ করে থাকল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আবার সখিনার চিৎকার শোনা গেলো। যেখানেই যাক.. রাত দশটার মধ্যে না খেলে আজকে আর কপালে ভাত নাই। শহর আলী কোনো জবাব দিল না। তবে খিদেটা আবার টের পেল। বাইরে যদিও তেমন একটা কাজ নেই; তবু্ও সে কিছুক্ষণ বাইরে থাকবে। আলাভোলা শহর আলীর একটু একাকি থাকা দরকার। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া করা দরকার। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় শহর হাঁটছে। উদ্দেশ্যহীন হাঁটা। মাঝে-মধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই আবার অপরাধীর মতো মাথা নিচু করছে। এমনি এক স্বর্গীয় সময়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ফোন দিলেন। শহর আলী সাহেব, আমার ছেলেকে পড়ানোর কথা বলেছিলাম.. মনে আছে? শহর আলী বলল, জী স্যার। আমি রাস্তায়... আসতেছি। প্রধান শিক্ষকের ছেলেকে যখন পাঠদান শেষ হল; তখন রাত দশটার কাছাকাছি। হেমন্তের শুভ্র তারা ভরা আকাশ। না ঠাণ্ডা আর না গরম। এই রকম আবহাওয়ায় সারারাত বাইরে কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সখিনার আলটিমেটাম এর কী হবে! যাই হয় হোক... হতে থাক। রাত সাড়ে এগারোটায় শহর আলী বাসায় ঢুকল। সবাই যার যার রুমে। কেউ পড়ছে আর কেউ ঘুমিয়ে আছে। দু’লোকমা ভাত কোনোরকমে গলধঃকরণ করে বিছানায় ঢলে পড়ল। সমস্ত শরীর ঘুম চাইছে; কিন্তু ঘুম আসছে না। সারাদিন পরে মেসেঞ্জারে ঢুকল। ফ্রান্সের একটি স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক মেসেজ দিয়েছেন, ভাই একটি কলাম চেয়েছিলাম, আপনি হয়ত ভুলে গেছেন! আগামীকালের মধ্যে অবশ্যই দিবেন। শহর আলীর সমস্ত ক্লান্তি কোথায় যেন উবে গেল। আগামীকাল আবার একই রুটিন। তবু্ও শহর আলীর কলাম লেখা চলছেই....হয়ত এভাবেই চলবে শহর আলীর একদিন-প্রতিদিন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct