দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়ায় বহুল আলোচিত নির্বাচনের পর আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আনোয়ারের পাকাতান হারাপান জোট ছাড়াও রয়েছে বারিসান ন্যাশনাল ও সারাওয়াকের জিপিএস জোট। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় কন্যাখ্যাত দেশ নেপালে সংসদের পূর্ণ মেয়াদ শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শাসক জোট সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলেও জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়ায় বহুল আলোচিত নির্বাচনের পর আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের অন্তর্ভুক্ত জোটগুলোর মধ্যে আনোয়ারের পাকাতান হারাপান জোট ছাড়াও রয়েছে আহমদ জাহেদ হামিদীর নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল ও জোহারির নেতৃত্বাধীন সারাওয়াকের জিপিএস জোট। এই তিন জোট এবং আরো কিছু দল ও স্বতন্ত্র সদস্য মিলিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকছে ঐক্য সরকারের ওপর। সরকারের বাইরে এখন কেবলই থাকছে বিরোধী পেরিকাতান ন্যাশনালভুক্ত দুটি দল বারাসাতু ও পাস। আপাতদৃষ্টিতে মালয়েশিয়ায় একটি স্থিতিশীল শাসন প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। যদিও দেশটির জটিল রাজনৈতিক সমীকরণে অস্থিরতা তৈরি হতে সময় লাগে না। এবারের রাজনৈতিক সঙ্কটের যেমন গভীরতা অনেক বেশি তেমনি এর উত্তরণ সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। রাষ্ট্রটির গভীর ক্ষমতা বলয়ের বড় অংশই এখন সম্ভবত একটি স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে এনে মালয়েশিয়াকে পুরনো সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে নিতে চাইছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় কন্যাখ্যাত দেশ নেপালে সংসদের পূর্ণ মেয়াদ শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শাসক জোট সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলেও জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে নতুন দূরত্ব ও হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। নেপালি কংগ্রেসের সাথে জোট করে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ও মাধব চন্দ্র নেপালের ইউনিফাইড সোশ্যালিস্ট কমিউনিস্ট পার্টি আসনপ্রাপ্তিতে এক ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। লাভবান হয়েছে নেপাল কংগ্রেস। এতে কেপি শর্মা অলির ইউনাইটেড নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ঐক্যের আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে। ফলে নেপালে কারা নতুন সরকার গঠন করবে তা নিয়ে আবারো অনিশ্চয়তা হাতছানি দিচ্ছে।
অনেক চ্যালেঞ্জ আনোয়ারের, রয়েছে আশাও। ক্ষমতার একেবারে দ্বারপ্রান্ত থেকে ছিটকে পড়ে ২৪ বছর জেল-জুলুম আর রাজপথে সংগ্রামের পর আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর ঠিক এ সময়টাতে আনোয়ারের প্রতি নানা ধরনের বিশ্বাস ভঙ্গের অন্যতম পক্ষ ড. মাহাথির মোহাম্মদের ৯৭ বছর বয়সে জামানত হারানো হারের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে হয়। মাহাথিরকে এখন মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অতীতের বিষয় ভাবা শুরু হয়েছে। আনোয়ার ইব্রাহিম এমন একসময় তিন গুরুত্বপূর্ণ জোটের এক ঐক্য সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন যখন মালয়েশিয়া নানা ধরনের গভীর সঙ্কট মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে একদিকে বহু বিভক্ত রাজনৈতিক ধারার মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় সাধনের চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি জাতিগত অবিশ্বাস ঘৃণা সৃষ্টির পরিবেশকে একটি ধারায় প্রবাহিত করে আবারো মালয়েশিয়াকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতৃত্বে প্রাসঙ্গিক করে তোলাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সে সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কাঠামোতে যে ভঙ্গুরতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ মালয়েশিয়াকে উন্নয়নের গতিপথে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও নতুন নেতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আনোয়ার ইব্রাহিমকে একেবারে স্বল্প সময়ে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা হলো জোটভুক্ত দলগুলোর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা। এ ক্ষেত্রে পাকাতান জোটভুক্ত তিন দল পিকেআর, ডিএপি ও আমানাহ রয়েছে এক দিকে। অন্য দিকে বারিসান ও জিএসপি জোট থেকেও মন্ত্রী নিতে হবে। এর বাইরে সাবাহর জিআরএস আর ওয়ারিসানও সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আনোয়ার সম্ভবত এ ক্ষেত্রে বিতর্কহীন ফর্মুলা অনুসরণ করে মন্ত্রিসভা গঠন করতে চাইবেন। সেই ফর্মুলা হতে পারে তার সম্ভাব্য ২৬ সদস্যের মন্ত্রিসভার সদস্য হবেন সংসদ থাকা আসনের ভিত্তিতে। আর ঐক্য সরকারের অন্তর্ভুক্ত জোটগুলোই প্রস্তাব করবে মন্ত্রী হিসাবে কারা তাদের প্রতিনিধি হবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct