সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: মারা গেলেন ১জন। কিন্তু সেই মৃত্যুর জেরেই নতুন জীবন ফিরে পেলেন ৪জন। নাহ কোনও রূপকথার গল্প নয়। চূড়ান্ত বাস্তব। ব্রেন ডেথের জেরে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির অঙ্গের হাত ধরে নতুন জীবন পেলেন দুই যুবক ও দুই বয়স্ক ব্যক্তি। প্রথম দুইজন পেলেন কিডনি, বয়স তাঁদের ২৮ বছর ও ৩৯ বছর। লিভার পেলেন ৭৮ বছর বয়সী এক বয়স্ক চিকিৎসক এবং হার্ট পেলেন বছর ৫৫’র এক ব্যবসায়ী। এই চারজনের দেহেই বেঁচে রইলেন মৃত ব্যক্তি। সব থেকে বড় কথা, এই অঙ্গ দানের জন্য এগিয়ে এসেছে যে পরিবার তাঁদের বসবাস গ্রামে। একদম কৃষক পরিবার। বাংলার বুকে দেখা যায় সচেতন শহুরে শিক্ষিত নাগরিকেরা ছাড়া আর কেউ মরণোত্তর অঙ্গদানে এগিয়ে আসছেন না। সেই ধারনায় ধাক্কা দিল হুগলি জেলার চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা বাসুদেব কাঁড়ার(৫৩) পরিবার।কিছুদিন আগেই এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত বাসুদেববাবু। প্রথমে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল গুপ্তিপাড়ার পাশেই থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরেও অবস্থার বিশেষ কিছু উন্নতি হয়নি তাঁর। বরঞ্চ ক্রমশই তিনি যেন এগিয়ে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর দিকে।
বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা তাঁর ভাগ্নে তুষার দাসকে জানিয়ে দেন বাসুদেববাবুর ব্রেন ডেথ হয়েছে। কিন্তু তাঁর অঙ্গগুলি এখনও ঠিক আছে। তাই তাঁর পরিবার যদি অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বাসুদেববাবুর অঙ্গে আরও ৩-৪জন মানুষ বেঁচে থাকতে পারবেন। তাঁরা নতুন জীবন পাবেন। সাধারণত এই প্রস্তাবে হুট করে কেউ রাজি হন না। বিশেষ করে কলকাতার বাইরে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করা পরিবারের সদস্যরা একদমই রাজি হননা এই ধরনের প্রস্তাবে। কিন্তু বাসুদেববাবুর পরিবার রাজি হয়। তার জেরেই এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই গ্রহিতার খোঁজ শুরু করেন।শুক্রবার সকালে বাসুদেববাবুকে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার পাশাপাশি তাঁর দুটি কিডনি, হার্ট ও লিভার দেহ থেকে বার করে তা সংরক্ষণ করার কাজ শুরু হয়ে যায়। রাতেই শুরু হয় প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার। কিডনি পান বছর ৩৯’র মোক্তার মণ্ডল ও বছর ২৮’র উজ্জ্বল দত্ত। লিভার পেয়েছেন সিরোসিসে ভোগা এক প্রবীণ চিকিৎসক। হার্ট পেয়েছেন বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালের হৃদরোগী, বাদশা খান নামে এক বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ়। সময় বদলাচ্ছে, মানুষের মানসিকতাও বদলাচ্ছে। ঠিক ভাবে সময় মতন বোঝালে যে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে অঙ্গদানের মাধ্যমে তা দেখিয়ে দিল বাসুদেববাবুর পরিবার এবং অবশ্য এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct