সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: কড়া হুঁশিয়ারি। কিংবা পদক্ষেপও। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি ঠেকাতে রাজ্যের পাশে দাঁড়াল কেন্দ্র সরকার। রাজ্যের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজকে সমর্থন জানিয়ে ও প্রশংসা করে কেন্দ্র সরকার বাড়তি প্রস্তাব দিয়েছে নবান্নকে। আবাস যোজনার কাজে সমীক্ষায় গিয়ে যদি সরকারি আধিকারিক বা কর্মীরা আক্রান্ত হন আর তা যদি পুলিশ দিয়ে সামাল দেওয়া না যায় তাহলে রাজ্য চাইলেই বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাবে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকে আবাস যোজনার তালিকাভুক্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিরাপদে সমীক্ষার কাজ করবেন সরকারি আধিকারিক থেকে কর্মীরা। নবান্ন সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, রাজ্যের তরফে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নবান্নের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই এক জায়গায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।
দোষীরাও গ্রেফতার হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই।প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় নির্মিত বাড়ি তুলে ধরা হচ্ছিল রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘বাংলার বাড়ি’ নাম দিয়ে। পাশাপাশি সেই বাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল। এই দুটি বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় সরকারও তার জেরে ওই প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার সেই প্রকল্পের জন্যই ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে বাংলায়। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে ১৫ দফা শর্ত। সেই শর্ত মেনেই আগামী ৩ মাসের মধ্যেই বাংলায় ১১ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা বাংলার ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ধরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার। সেই শর্ত মানতে গিয়েই রাজ্য সরকার আবাস যোজনার জন্য তালিকায় নাম ওঠাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার জেরে বেশ কিছু জায়গায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে সরকারি কর্মচারি থেকে আধিকারিকদের। তার জেরে মাঠে নামতে হচ্ছে পুলিশকেও।
কিন্তু তাতে পরিস্থিতি যে খুব সুবিধা তা বলা যায় না। হুমকি, ধমকি, মারধরের ঘটনা ঘটছেই। এই অবস্থায় কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সমীক্ষার কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহয্য লাগবে কিনা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকে সমীক্ষার কাজ করতে হবে।কিন্তু নবান্নের তরফে কেন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ করা হয়েছে বলেই সুত্রে জানা গিয়েছে। যদিও পরিস্থিতি যে খুব একটা উৎসাহ বর্ধক তা কিন্তু মোটেও বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে আশাকর্মীরা অফিসে বসে নিজেদের মর্জি মতন সমীক্ষার কাগজপত্র সাজাচ্ছেন স্থানীয় নেতাদের নির্দেশে, তাঁদের মধ্যে সবুজ-গেরুয়া-লাল-নীল সবাই আছেন। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে যাদের বাড়িতে সমীক্ষায় যাওয়া হচ্ছে তাঁরা মারমুখী হয়ে তেড়ে আসছে। কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে পাকা দোতলা তিনতলা বাড়ির লোক বাড়িতে এসি, ফ্রিজ, কালার টিভি, গাড়ি নিয়ে বসে থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য নাম লিখিয়ে বসে আছেন। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে বাড়ির মালিক জানেনই না তাঁর নামে এই প্রকল্পের জন্য কেউ আবেদন করে বসে আছে। এই সব দুর্নীতির ঘটনার ছবি ও ভিডিও সংবাদমাধ্যমের হাতেও আসছে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়াচ্ছে। আর সেই সঙ্গে এটাও দেখা যাচ্ছে দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে যেখানে সেখানেই সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে যাতে সেই দুর্নীতির অভিযোগ সামনে না চলে আসে
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct