সুব্রত রায়, আজমির, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার আজমির শরিফে খাজা মইনুদ্দিন চিশতি রহ-এর দরগায় গেলেন। মরু রাজ্যের এই শহর প্রতি বছর সাক্ষী থাকে সিনেমার তারকা থেকে ভিভিআইপিদের আগমনের জন্য। কিন্তু স্মরণকালে কাউকে ঘিরে এমন উন্মাদনা দেখা যায়নি। মাজার যাওয়ার রাস্তায় ফুলের মালা বিক্রি করা আজমল শেখ সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘দিদিতে মজেছে আজমের’। দিদি মানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি পা রেখেছিলেন রাজস্থানের আজমির শহরে। দেশের বিখ্যাত দরগা আজমির শরিফে তিনি এদিন চাদর চড়িয়েছেন। আর এদিন তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে বাঁধ ভাঙা ভিড় আছড়ে পড়েছিল দরগা ও আশেপাশের চত্বরে। কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনিতে থাকা বাংলার অগ্নিকন্যাকে দেখতে পুলিশের লাঠিপেটা থেকে ব়্যাফের তাড়া খেয়েও আবালবৃদ্ধবনিতা ভিড় জমিয়েছেন মমতার যাত্রাপথে। আর তা দেখে আজমেরবাসী অবাক। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে যে এমন উন্মাদনা তৈরি হবে শহরবাসীর মধ্যে তা তাঁরা ভাবতেই পারেননি। বার বার ভিড় সামলাতে কার্যত অসহায় দেখিয়েছে গেহলট সরকারের পুলিশ থেকে প্রশাসনকে। খাজা মইনুদ্দিন চিশতির মাজারে গিয়ে চাদর চড়িয়ে প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি অনেকদিন ধরেই এখানে আসতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি বলেন, এখানে আসার পর স্বস্তি পেয়েছি। এ সময় মুখ্যমন্ত্রীকে দরগাহের ছবি দেওয়া হয়। দরগায় জিয়ারত (দর্শন) চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব উৎফুল্ল দেখায়। তিনি দেশে শান্তি ও সুখের জন্য প্রার্থনা করেন এবং বাংলায় ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এ ব্যাপারে খাদিম মুকাদ্দাস মৈনি বলেন, মন্নতের সুতো বেঁধেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আজমির দরগাহ শরিফে গিয়েছিলেন, তখন তিনি এখানে মান্নাতের সুতো বেঁধে রেলমন্ত্রক পেয়েছিলেন। এ বার ফের মন্নতের সুতো বেঁধেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে পদাধিকারীদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাদের সাথে আনা একটি শাল উপহার দেন। দরগাহ থেকে ফেরার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামানিগেটের কাছে দেওয়ান সাহেবের হাভেলিতে যান, যেখানে তিনি দরগাহ দেওয়ান জৈনুল আবেদিন এবং তার ছেলে নাসিরুদ্দিনের সাথে দেখা করেন। তিনি তাদের সাথে কিছু সময় কাটান। মমতা সঙ্গে দেকা যায় কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ আফরিন আলিকেও। মমতার এই দরগা দর্শন নিয়ে আজমিরের এডিএম ভাবনা গর্গ জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিষাণগড় বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, যেখান থেকে তিনি সড়কপথে আজমির সার্কিট হাউসে পৌঁছান। এর পর দরগাহ রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী ব্যানার্জি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে পুলিশ সুপার চুনারাম জাটের নেতৃত্বে দরগার বাইরে কড়া পুলিশি বন্দোবস্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই সময়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতক্ষণ দরগায় ছিলেন, সাধারণ মানুষকে দরগায় যেতে দেওয়া হয়নি।এর পর তীর্থ রাজ পুষ্কর সরোবর পুজো ও ব্রহ্মা মন্দিরের দর্শনের উদ্দেশে রওনা দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct