নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: সারা বাংলা ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের ‘ওয়াকফ বোর্ড’ চলুন’ অভিযানকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল সোমবার। পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডের তরফে অভিযোগ, ইমাম আ্যসোসিয়েশনের নামাধারী কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওযাকফ অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও ইমাম সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে ওয়াকফ বোর্ডের সিইও-কে অপসারণ সহ দশ দফা দাবিতে কলকাতার ম্যাডান স্ট্রিটে অবস্থিত ওয়াকফ বোর্ডে ডেপুটেশন দেওয়ার কর্মসূচি ছিল সারা বাংলা ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের। তার আগে স্টেটসম্যান হাউসের সামনে তারা এক সমাবেশ করে। সেই সমাবেশে ইমামদের বেশ কিছু দাবির পক্ষে সোচ্চার হন পীরজাদা সাহিম সিদ্দিকী, আবু আফজাল জিন্না, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা নিজামুদ্দিন বিশ্বাস প্রমুখ। ওই সমাবেশে যে সব দাবি জানানো হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ইমাম ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে, ইমামভাতা অনলাইনে করা চলবে না, ইমামদের লাইফ সার্টিফিকেটে প্রধান বা কাউন্সিলের সই বাতিল করতে হবে, অবিলম্বে ওয়াকফ বোর্ডের সিইও-কে অপসারণ করতে হবে প্রভৃতি। সূত্রের খবর, ধুন্ধুমার কাণ্ডটি ঘটে সমাবেশ থেকে বেশ কিছু সংগঠনের কর্মী ওয়াকফ বোর্ডে ডেপুটেশন দিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। এ ব্যাপারে ওয়াকফ বোর্ডের সিইও আহসান আলি ‘আপনজন’কে জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ডেপুটেশন দেওয়ার আগেই ইমামদের নামধারী ‘কিছু’ অবাঞ্ছিত ব্যক্তি অফিসে ঢুকে কম্পিউটার সামগ্রী ভাঙচুর করে। নথিপত্র নষ্ট করে দেয়। তার অভিযোগ, ওই সব ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের’ দাবি ছিল, ইমাম ভাতা দেওযার প্রক্রিয়া অনলাইনে দেওয়া চলবে না ইত্যাদি। যদিও, সিইও আহসান আলির দাবি, ইমাম ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক শ্রেণির ‘দালাল চক্র’ গড়ে উঠছিল। তা রুখতে অনলাইনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটাই তাদের ক্ষোভের কারণ। সিইও আহসান আলি আরও জানান, মনিটরের কাঁচ ভাঙা সহ যে কম্পিউটারের ক্ষতি করা হয়েছে তাতে ওয়াকফে গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে। তাই নথি নষ্টের আশঙ্কাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপিত আবদুল গনি ‘আপনজন’কে জানান, যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তবে, এ ব্যাপারে সারা বাংলা ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্ণধার আবু আফজাল জিন্না অভিযোগ করেন, ‘ওয়াকফ বোর্ডের সিইও-র অফিসে ঢুকে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করতে গেলে তাদেরকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ইমাম ভাতা না পাওয়ায় জেলা থেকে আসা ইমামদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছিল। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সামান্য কিছু সামগ্রী ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।’ তাদেরকে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া না হলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটত না বলে দাবি আবু আফজাল জিন্নার। যদিও এ ব্যাপারে সারা বাংলা ডিস্ট্রিক্ট ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা নিজামুদ্দিন বিশ্বাসের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আর এক কর্তা পীরজাদা সাহিম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অন্যদিকে, ওয়াকফ বোর্ডে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োজিত থাকলেও তাদের অগোচরে একদল ইমাম সিইও-র কক্ষে প্রবেশ করায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সূত্রে জানা গেছে, গুটি কয়েক নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন থাকলেও তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে এক এক করে ইমামরা ভিতরে ঢুকে জড়ো হয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াকফ বোর্ডের এক কর্মীর অভিযোগ, ইমাম ‘নামধারী’রা একসাথে জড়ো হয়ে সিইও-র ঘরে ঢুকতে গেলে তাদেরকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সেই বাধা না মেনে সিইও-র ঘরে ঢুকে কম্পিউটার ভাঙচুর সহ নথিপত্র নষ্ট করা হয়। এই ঘটনায় ওয়াকফ বোর্ডে কর্মরতদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বোধে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল গনি এলে, তার কাছে কর্মীরা উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি জানান। সিইও-র কক্ষে ভাঙচুরের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে কর্মীরা কাজ বন্ধ রাখেন। চেয়ারম্যানের আশ্বাসে তারা ফের কাজে যোগ দেন। জানা গেছে, এই ঘটনার পর চেয়ারম্যান আবদুল গনির কাছে ইমাম সংগঠনের পক্ষে স্মারকলিপি জমা দিতে যায় একদল ইমাম। কিন্তু ভাঙচুর করায় তিনি স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করেন বলে ওয়াকফ বোর্ড সূত্রে খবর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct