টেস্ট-এর পর মাধ্যমিকের বিশেষ প্রস্তুতি (এবার নজর দাও লেখনশৈলীর দিকে, নম্বর অবশ্যই বাড়বে)
শুভজিৎ পাত্র
(শিক্ষক, নব নালন্দা হাইস্কুল, কলকাতা)
টেস্ট পরীক্ষা সবে শেষ হল। খুব শিগগিরিই হাতে পেয়ে যাবে ফলাফল। এবার অতি দ্রুত বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করো নিজের ভুল-ত্রুটি কোথায়, প্রতিটি বিষয়ে অধ্যায় ধরে ধরে। নিষ্ঠাবান ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকতে এগিয়ে এসেছেন রাজ্যের গুণী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লিখছেন ভুল শুধরে নিয়ে চূড়ান্ত মাধ্যমিক প্রস্তুতির কথা, নির্বাচিত প্রশ্ন উত্তর। নিয়মিত প্রকাশ পাবে আপনজন পত্রিকায়। সম্পাদনায় অভিজ্ঞ শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল।
টেস্ট পরীক্ষা শেষ। সত্যিই এবার মাধ্যমিক একেবারে দোরগোড়ায়। স্কুলের গণ্ডির বাইরে গিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। তাই স্বাভাবিকভাবে এই সম্পর্কে পরীক্ষার্থীদের ভাবনা-চিন্তার অন্ত নেই। ছাত্রছাত্রীরা পড়ছে তো অনেকক্ষণই, তবে সবসময় তারা আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না! আসলে এর কারণ,বিষয়টি যেহেতু ভাষা-সাহিত্যের,তাই শুধু কিছু তথ্য মনে রাখলেই এই বিষয়ে খুব ভালো ফল করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল রাখা দরকার একই ধরনের তথ্যপূর্ণ লেখা লেখনশৈলীর পার্থক্যের কারণে অনেকখানিই পালটে যেতে পারে। নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রেও তা প্রভাব ফেলে। তাই উত্তরের ভাষার মান যাতে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে তাই শিক্ষার্থীদের পাঠ্য গল্প-কবিতা খুঁটিয়ে পড়ার পাশাপাশি পাঠ্যবহির্ভূত কিছু গল্প-প্রবন্ধও পড়া জরুরি। পাশাপাশি এটাও দেখা যায় যে ছাত্রছাত্রীরা যতটা পড়ার প্রতি মনোযোগী,ততখানি লেখার ক্ষেত্রে নয়। এটাও পরীক্ষার উত্তরপত্রে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি থেকে যাওয়ার একটি কারণ। তাই অধ্যায় ধরে ধরে যত্নসহকারে অতি সংক্ষিপ্ত,সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর অনুশীলন করা দরকার।এক্ষেত্রে দুটো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি
১.প্রতিটি উত্তর লেখার সময় উত্তরের শব্দসীমা মান্য করতে হবে।প্রশ্নে দেওয়া শব্দসীমার থেকে খুব বেশি বা কম শব্দ উত্তরে না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
২.নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর সমাপ্ত করা যাচ্ছে কিনা!সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে ভালো উত্তর লিখেও অসম্পূর্ণ উত্তরপত্রের কারণে ভালো নম্বর আসবে না।
আরেকটি বিষয় হল_ছাত্রছাত্রীদের উত্তরপত্রে প্রায়ই প্রচুর বানান ভুল হয়।যেটা তাদের নম্বর কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।এর মধ্যে কিছু বানান কিন্তু আমরা একটু খেয়াল করলেই ঠিক করতে পারি।যেমন বাংলায় ‘ইক’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে সর্বদা ই-কার হয় এবং আদ্যবর্ণ দীর্ঘত্ব পায়।তাই সমাজ কিন্তু সামাজিক। ইতিহাস কিন্তু ঐতিহাসিক। শরীর কিন্তু শারীরিক ইত্যাদি শব্দ। আবার বাংলায় কোনো শব্দ ঈ-কারান্ত হলে তারপরে যদি ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়,তাহলে ঈ-কার ই-কারে পালটে যায়।যেমন সহযোগী কিন্তু সহযোগিতা। পারদর্শী কিন্তু পারদর্শিতা ইত্যাদি শব্দ। তাছাড়া মনে রাখতে হবে অদ্ভুত শব্দটি ছাড়া ‘ভূত’ শব্দটি যেখানেই বসুক না কেন সর্বত্র ঊ-কার হবে,যেমন দ্রবীভূত,ভূতপূর্ব,ভূতুড়ে ইত্যাদি শব্দ।কটূক্তি,মরূদ্যান,লঘূর্মি ইত্যাদি শব্দে কেন উ-কার হবে না তা আমরা সহজে বুঝে নিতে পারি শুধু সন্ধির দিকটি খেয়াল করে।যে কারণে লঘু + ঊর্মি= লঘূর্মি।সেকারণেই কটু+উক্তি_হয়ে গেল কটূক্তি।আমাদের প্রশ্নপত্রে ১৭টি বহুবিকল্পীয় (Mcq) এবং ১৯টি অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন থাকবে,তাই পাঠ্য গল্প-কবিতাগুলি খুঁটিয়ে না পড়লে কেবল ধারণা থেকে উত্তর লেখা যাবে না। তাই টেক্সট বারংবার পড়ার কোনো বিকল্প নেই।মনে রাখতে হবে অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে প্রয়োজন না হলেও ৬০ শব্দের সংক্ষিপ্ত এবং ১৫০ শব্দের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই উৎস-সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে,অর্থাৎ কবি বা লেখকের নামের সঙ্গে গল্প বা কবিতার নাম বিশেষক চিহ্ন অর্থাৎ একটি ইনভাটেড কমার মধ্যে লিখতে হবে। ’অধ্যয়ন ও জ্ঞানলাভ’ প্রবন্ধে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় লিখেছিলেন_কত ঘন্টা পড়া হচ্ছে,তার থেকেও বেশি মূল্যবান কতখানি একাগ্র মনে পড়া হচ্ছে।তাই একাগ্রচিত্তে যদি নিয়মিত কয়েক ঘন্টা পড়া এবং লেখার অভ্যাস করা যায়,তাহলেই ভালো ফললাভ সম্ভব হবে। এখন মাধ্যমিকে যে ধাঁচে প্রশ্নপত্র হয়,তাতে সঠিক পদ্ধতিতে যত্নসহকারে পড়াশোনা করলে অবশ্যই সাফল্য আসবে।সকল পরীক্ষার্থীর প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct