সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: রাজ্য তো বটেই, দেশের রাজনীতিতেও যে ঘটনা ঘিরে রীতিমত চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবার তাতেই জল ঢেলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বেলার দিকে তিনি ৪ দিনের সফরে দিল্লির পথে রওয়ানা দেন। তার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণেই তিনি দিল্লি যাচ্ছেন জি-২০ বৈঠকে যোগ দিতে। কিন্তু এবারের সফরে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাদা করে কোনও বৈঠক হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার জেরে এখন রীতিমত স্বস্তির ছায়া বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। কেননা রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমত চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল এই মোদি-মমতা বৈঠক নিয়ে। বাম ও কংগ্রেসের তরফে আবার এই সম্ভাব্য বৈঠককে রীতিমত ‘সেটিং’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছিল বার বার। এই সবের প্রেক্ষাপটে এবার মমতা নিজের জানিয়ে দিলেন ৪ দিনের সফরে তিনি দিল্লি গেলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কোনও সাক্ষাৎ বা বৈঠক হচ্ছে না। আগামী বছর জি-২০ সম্মেলনের বৈঠক বসতে চলেছে ভারতের মাটিতে। সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে চলেছে ভারত। সেই উপলক্ষে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, দেশজুড়ে মোট ২০০টি বৈঠক হবে। যার প্রথম ধাপ হিসাবে দেশের রাজনৈতিক দলের প্রধানদের বৈঠকে ডেকেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা এই বৈঠকেই এদিন যোগ দিতে দিল্লি যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনও তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই সফর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়, দলের নেত্রী হিসাবেই হচ্ছে। দিল্লিতে নেমেই তিনি যান রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানেই বিকেলে জি-২০ সংক্রান্ত বৈঠকেও যোগ দেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হবে দিল্লিতে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হতে যাতে বিভিন্ন পরামর্শ চাওয়া হয়। এই বৈঠকে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক, সিকিমের প্রেম সিং তামাং, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্ডে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, জগন মোহন রেড্ডি, এমকে স্ট্যালিন, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, এইচডি দেবগৌড়া, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, চন্দ্রবাবু নাইডু প্রমুখ। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। সূত্রের খবর, বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রক জি-২০-তে ভারতের পৌরহিত্যে কী কী কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করার কথা বলা হয়। গত ১ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জি-২০-এর পৌরহিত্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করে। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে এই মাসের শুরু থেকে সারা দেশে ২০০ টিরও বেশি প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জি-২০ বা গ্রুপ অব ২০ হচ্ছে বিশ্বের প্রধান উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির একটি আন্তঃসরকারি ফোরাম। এটি আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct