বিন্নি
শংকর সাহা
প্রতিদিন রাতে নিচের বারান্দা থেকে কান্নার সেই আওয়াজটি যেন আজ চরম আস্বস্তির করণ হয়ে দাঁড়ায় অম্বরীষের। দিনে দিনে শিরোর কান্নার আওয়াজটি বড্ড অসহ্য লাগে অম্বরীষের। শিরো অম্বরিষের বাড়ির পোষ্য কুকুর। সেইবার দিঘায় ঘুরতে গিয়েই তো বিন্নি কিনেছিল তাকে। সারাদিন কাজের পরে রাতে ঘুমোবার সময়ে এমন কান্নার আওয়াজ এতটাই অসহ্য বোধ যে শিরোকে নিয়ে অন্যকিছু ভাবছে অম্বরীষ। অম্বরীষ ও বিন্নির বিয়ে সবে একবছর হয়েছে। সেইবার দীঘায় মধুচন্দ্রিমা করতে গিয়ে পোষ্যটিকে কিনেছিল বিন্নি। ছোটো থেকেই পোষ্যের খুব শখ তার। শিরোকে খাওয়ানো ,স্নান করিয়ে দেওয়া এইভাবেই তাকে নিয়ে কেটে যায় বিন্নির সময়। এই নিয়ে অম্বরীষের সঙ্গে তার প্রায় কথা কাটাকাটি লেগেই থাকতো। কিন্তু বর্তমানে শিরোকে নিয়ে বিন্নির মন ভালো নেই। প্রায় রাতে ও কাঁদে। পশু ডাক্তার দেখিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। সেদিন একটু রাত করেই বাড়ি ফেরে অম্বরীষ। রাতে শুতে গেলে প্রতিদিনের মতো সেদিনও নিচ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। এদিনে বিন্নি ঘুমিয়ে পড়লে অম্বরীষ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসে। সিঁড়ির নীচে একটি বস্তার উপরে শুয়ে কাতড়াচ্ছে শিরো। অম্বরীষ বিন্নিকে না জানিয়েই বস্তায় পুড়ে শিরোকে ছেড়ে আসে পাড়ার মাঠে। হেমন্তের সকালে আজ চারিদিকে বেশ কুয়াশা পড়েছে। উত্তুরে বাতাসে শীতটা এবার বেশ ঝাঁকিয়ে আসছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শিরোর জন্যে ছুটে আসে বিন্নি। সিঁড়ি বেয়ে নেমেই চমকে ওঠে বিন্নি। শিরো কোথায়?শুধু যে বস্তাটিই পড়ে আছে সেখানে। শিরো নেই? গোটা বাড়ি চিৎকার করতে থাকে বিন্নি। অম্বরীষ ঘুম থেকে উঠেই চিৎকার শুনে নচে নমে আসে অম্বরীষ। বিন্নিকে কালকের রাতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি বলে অম্বরীষ। অম্বরীষের মুখের কথাগুলো যেন তীরের মতো বাঁধে বিন্নিকে। সমস্ত বিষয়টি বুঝতে পারে সে। শিরোর কান্নাই কি অম্বরীষের অসহ্যের কারণ! বিন্নি তেমন আর কথা বলেনা। শুধুই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে সিঁড়ির নীচে থাকা সেই বস্তার দিকে। চোখটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। পাশেই পড়ে আছে শিরোকে রাতে খেতে দেওয়া খাবারের থালাটি...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct