সেক আনোয়ার হোসেন, কাঁথি, আপনজন: পূর্ব মেদিনীপুরেও চালু হল ‘এক ফোনে অভিষেক’ মঞ্চ থেকেই যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭ বলে দেন তিনি। এই একই নম্বরটি চালু আছে তাঁর লোকসভার কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারেও। ডিসেম্বর প্ল্যান’ নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল সেই ডিসেম্বরের কথা। ডিসেম্বর জুড়ে ‘বেইমানমুক্ত; ‘বিশ্বাসঘাতকমুক্ত’ মেদিনীপুর-কর্মসূচি নিচ্ছে তৃণমূল। অধিকারী গড়ে দাঁড়িয়ে এমনই নির্দেশ দিলেন অভিষেক। রবিবার থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। প্রতিটি বুথ, ব্লক, টাউন, পঞ্চায়েত থেকে গোটা জেলায় এই শিরোনামে হবে মিটিং-মিছিল। তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘মেদিনীপুরের বেইমানকে বিতাড়িত করতে হবে।’ শনিবার কাঁথিতে জনসভা করলেন তৃণমূলের সেনাপতি। সভামঞ্চ থেকে ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন অভিষেক।নাম না করে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু কে আবার এই ডিসেম্বরেই মেদিনীপুরের এক সন্তান সম্মান ভূলুন্ঠিত করেছে বলে দাবি করেন তিনি। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন সেই ঘটনাকেই ‘বেইমানি’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়,’যে মাসে তাম্রলিপ্ত সরকার তৈরি হয়েছিল, সেই ডিসেম্বরই বিশ্বাসঘাতক (শুভেন্দু) দল ছাড়ল। ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে, নিজের ঘাড়-পিঠ বাঁচাতে দু’ বছর আগে মেদিনীপুরের সম্মান বিক্রি করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বিশ্বাসঘাতকরা। মেদিনীপুরের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। তাঁকে ৫০০ বছর বিশ্বাসঘাতক, মীরজাফর বলে কটাক্ষ করবে সাধারণ মানুষ।’ এরপরই স্থানীয় নেতৃত্বকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ ডিসেম্বর জুড়ে ‘বেইমানমুক্ত; ‘বিশ্বাসঘাতকমুক্ত’ মেদিনীপুর কর্মসূচি নিন। এদিনের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেন অভিষেক।তাঁর বিরুদ্ধে হস্টেল তৈরিতে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ আনেন তিনি। অভিষেকের কথায়,’কথায় কথায় বলে সরকারের ৮০ শতাংশ মানুষ ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।যারা দুর্নীতি করেছে তারা ওর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।চোরেরা যোগাযোগ রেখেছে।’এরপরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘১৫ দিন পর আমি আবার কাঁথিতে আসব।উনিও আসুন। উনিও নিজের খাতা নিয়ে আসুন।আমিও আনব। চ্যালেঞ্জ করছি,ওকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। মানুষের সামনে উলঙ্গ করতে যদি না পারি, তাহলে আমি রাজনীতি ছাড়ব।’অভিষেকের আরো কটাক্ষ,’ভেবেছিলাম এখানে আসব,রাজনৈতিক তরজা হবে।কিন্তু একজন তো ভয়ে ল্যাজ গুটিয়ে ডায়মন্ড হারবার পালিয়েছে।’একইসঙ্গে তাঁর চ্যালেঞ্জ,এবার ২০০ মিটারের মধ্যে সভা করেছি,পরেরবার ২০ মিটারের মধ্যে সভা করব। ‘অভিষেক আরো বলেন ,রাজ্যের সবচেয়ে বড় তোলাবাজ, ঘুষখোরের নাম কী? টিভির পর্দায় কাকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে? সুদীপ্ত সেন কার নামে চিঠি দিয়েছে? অধিকারী পরিবারকেও নিশানায় নেন তৃণমূল নেতা। বিশ্বাসঘাতকদের পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া করে ছাড়বেন, রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করে দেবেন।
এদিনের সভায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ১ লক্ষ মানুষের জমায়েত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে এদিনের জমায়েত দেড় লক্ষের আশেপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ভিড়ের জেরে কাঁথি শহরের যান চলাচল থমকে যায়। মূলত যে রাস্তা ধরে বিভিন্ন মিছিল এগোচ্ছিল সেই রাস্তা দিয়ে কোনও গাড়ি আসা-যাওয়া করতে পারছিল না। বেলা ৩টে ১০ নাগাদ কাঁথির ওই মঞ্চে পৌঁছন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শহিদ ক্ষদিরাম বসুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন তিনি। অভিষেককে দেখে তুমুল উৎসাহের ছবি দেখা যায় কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে। মঞ্চে উঠে দলীয় কর্মী এবং সমর্থকদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বার্তা দেন তিনি। অভিষেককে ফুল দিয়ে বরণ করেন কাঁথি জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণকুমার মাইতি। বিকেল ৩টে ২০ নাগাদ বক্তৃতা শুরু করেন অভিষেক। প্রথমেই তিনি এদের সভায় জনজোয়ারের জন্য আমজনতাকে ধন্যবাদ দেন। বলেন, ‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উপস্থিত হয়েছেন সভা। এর থেকে অনেক বেশি মানুষ রাস্তায় আছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে সভা করলে জায়গা ছোট হয়ে যায়। বিধানসভা নির্বাচনের সময় সভা করে গিয়েছিলাম। এই জেলার মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সে বিশ্বাসঘাতক, বিজেপির পা ধরেছে।’এরপরেই অধিকারীদের নাম না নিয়েই আক্রমণ শুরু করেন অভিষেক। বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যে ভাবে তৃণমূলকে দেখতে চায়, আমরা সেটা করতে বদ্ধপরিকর। আমরা ঠিকাদারদের মতো করে পার্টিকে গড়তে বদ্ধপরিকর নই। শহিদ ক্ষুদিরাম বসু আকাশের দিকে বুক চিতিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। আর সেই পূর্ব মেদিনীপুরের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করে ইডি, সিবিআই থেকে বাঁচতে বিজেপির নেতাদের পা ধরে দু’বছর আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিল তাকে এই জেলার মানুষ ক্ষমা করবে না। পূর্ব মেদিনীপুরের এই বিশ্বাসঘাতককে আগামী ৫০০ বছর মিরজাফর, গদ্দার বলে ডাকবে। বিশ্বাসঘাতক এবং বেইমান মুক্ত মেদিনীপুরের মাটি চাই। যার পরিবার ব্রিটিশ তাড়ায় সে অমিত শাহের পায়ে হাত দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবে? এই মাঠে আমার সভা নিয়ে ও আদালতে গিয়েছে। সকাল, বিকেল, শয়নে, স্বপনে আমার নাম করছে। কিন্তু সরাসরি আমার নাম নিতে পারে না। বলে, ভাইপো। এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় তোলাবাজ, ঘুষখোরের নাম কী? টিভির পর্দায় কাকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে? সুদীপ্ত সেন কার নামে চিঠি দিয়েছে? এই কলেজের গার্লস হস্টেল হচ্ছিল ২০১৫ সালে। ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার টেন্ডার হয়েছিল। তাতে ৮৫ লক্ষ টাকা বেশি দেওয়া হয়েছিল। গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান কে ছিলেন? তাঁরাও এই সভা শুনছেন। কেউ মোবাইলে, কেউ মাইকে শুনছে। ২০০ মিটার দূরে তো বাড়ি। এদের কাছে সততার পাঠ তৃণমূল শিখবে না।’ পাশাপাশি আগামিকাল থেকে ‘বেইমান মুক্ত’ কর্মসূচি পালিত হবে পূর্ব মেদিনীপুরে, এমনটাই ঘোষণা করে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মসূচি পালনের নির্দেশ তিনি দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতৃত্বকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct