সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: খাগ জুনিয়র হাই স্কুল, বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলঘেরা গ্রামের এক প্রান্তে অবস্থিত একটি স্কুল, যা সরকারিভাবে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে আজ পাঁচ বছরের বেশি হল। ২০১৪ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে সোনামুখী ব্লকে এই স্কুলটি চালু হয়। সোনামুখী ছাড়াও আশেপাশের বড়জোড়া ও ওন্দা ব্লক - সব মিলিয়ে খাগ, মদনমোহনপুর, কড়াশুলি, শুড়িপুকুর সহ প্রায় ১০ টা গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসত এই স্কুলে। পড়ুয়াদের মধ্যে আনুমানিক ১০ শতাংশের বেশি আদিবাসী তথা তফসিলি উপজাতিভুক্ত এবং এক তৃতীয়াংশ তফসিলি জাতিভুক্ত। ২০১৪ থেকে ২০১৭ অব্দি স্কুল চলাকালীন ছাত্রছাত্রী সংখ্যা দাঁড়ায় একশোরও বেশি। তারপর স্কুল বন্ধ হয়। পড়ানোর মানুষের অভাবে আশেপাশের গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসার রাস্তা বন্ধ হয়। খাগ গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল আছে। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে এখন এই গ্রামগুলোর ছাত্রছাত্রীদের যাওয়ার একমাত্র জায়গা পাঁচাল হাই স্কুল - যা খাগ থেকে কম করে ৬-৭ কিলোমিটার রাস্তা ও মদনমোহনপুর থেকে ৯ কিমিরও বেশি। অন্য গ্রামগুলো থেকেও কমবেশি তাই। রাস্তা মানে জঙ্গলের রাস্তা - হাতি পারাপারের জন্য বাঁকুড়ার (উত্তর বনবিভাগের অন্তর্গত) অন্যতম চিহ্নিত বনাঞ্চল। এই রাস্তা পেরিয়ে সদ্য প্রাইমারি গণ্ডি ডিঙোনো ছেলেমেয়েদের স্কুল যাওয়া নিয়ে বাড়ির লোকের দুশ্চিন্তার অভাব নেই। এলাকার মানুষের চাপে ২০১৯ এ একবার অল্প কিছু সময়ের জন্য স্কুল খোলে। দেখা যায় পড়ুয়ার সংখ্যা তখন অনেক কমে গেছে। আশেপাশের গ্রামের অনেক বাড়ির ছেলেমেয়েরাই ইতিমধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরই নামে লকডাউনের খাঁড়া। লকডাউন পেরিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার পর যখন নতুন করে বন্ধ স্কুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, স্থানীয় বিধায়ক আশ্বাস দেন সদর্থক কিছু করার। কিন্তু এখনো অবধি সদর্থক কিছু বাস্তবায়িত হয়নি। বন্ধ স্কুলের বেঞ্চিতে ধুলো আর চারপাশে আগাছা ক্রমশ স্কুলটাকে গ্রাস করছে। নেতা-মন্ত্রীদের কথায় আর ভরসা নেই মানুষের। তারা নিজেদের সন্তানের কথা ভেবেই স্কুল খোলার জন্য সবরকম চেষ্টা করতে নেমেছেন। গড়ে উঠেছে “খাগ জুনিয়র হাই স্কুল বাঁচাও কমিটি” নামে দলমতনির্বিশেষে স্থানীয় একটি লড়াইয়ের মঞ্চ। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসাবে ঠিক হয়েছে বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) এর অফিসে একটি ডেপুটেশন দেওয়া হবে। এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন মিড-ডে মিলের কর্মীরাও, যারা কাজ হারিয়েছেন এই স্কুল বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই। তারাও নিজেদের দাবি তুলে ধরবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct