আপনজন ডেস্ক: অবশেষে আদালতের নির্দেশে ১৮৩ জন অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামের তালিকা জমা দিল পর্ষদ। পার্বত্য এলাকা বাদ দিয়ে নবম ও দশম শ্রেণীতে যারা অযোগ্য, অর্থাৎ টাকার বিনিময় শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে চাকরিতে নিয়োগ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা আদালতে পেশ করল পর্ষদ। মূলত নবম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকাতে যারা রয়েছেন তাদের নিয়োগ করা হয়েছিল বিভিন্ন স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, অংক, ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ানোর জন্য। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের মামলার শুনানিতে এদিন রীতিমতো আক্রমণাত্মক ছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বেশ কয়েক দিন ধরেই এসএসসি-র বিরুদ্ধে একের পর এক নির্দেশ দেন তিনি।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসএসসি নবম-দশমে ১৮৩ ভুয়ো শিক্ষকদের সুপারিশের তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা পেরনোর আগেই স্কুল সার্ভিস কমিশন অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে দিল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য ছিল, এদের মধ্যে ২০ জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অযোগ্য প্রার্থীদের ‘ধেড়ে ইঁদুর’ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ। দ্বিতীয় নির্দেশ বলা হয়েছে, ১৮৩ জনের মধ্যে কতজন কর্মরত রয়েছেন, তাঁরা কোন কোন স্কুলে কাজ করছেন, সেই তালিকা জেলা স্কুল পরদর্শকের কাছে চেয়ে পাঠাবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। বিচারপতির নির্দেশ ছিল, ‘তিন দিনের মধ্যে কমিশনকে এই তথ্য জানাবেন জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা।’ কোনও ডিএসআই ঠিক মতো কাজ না করলে তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। এদিকে, গাজিয়াবাদ এবং এসএসসি দফতর থেকে মোট ২টি করে হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানান, গাজিয়াবাদের হার্ডডিস্কের সঙ্গে কলকাতা থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিস্কে নম্বরের বিস্তর ফারাক রয়েছে।
গাজিয়াবাদের হার্ডডিস্কে যেখানে কেউ শূন্য কিংবা ১-২ পেয়েছেন, কলকাতার এসএসসি দফতর থেকে বাজেয়াপ্ত হার্ডডিস্কে সেই নম্বরটাই বেড়ে ৫০,৫২, ৫৩ হয়ে গিয়েছে।ওই হার্ডডিস্কগুলি থেকে নমুনা হিসাবে ৪০টি ওএমআর শিট সিবিআই-এর তরফে হাইকোর্টে এবং এসএসসি-কে দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, আগামী ৩ ডিসেম্বর এসএসসি কর্তৃপক্ষ, মামলাকারী এবং সিবিআই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন। গাজিয়াবাদ এবং এসএসসির দফতর থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া হার্ডডিস্ক থেকে ইতিমধ্যেই ওএমআর শিটের যে নমুনা দেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে সিবিআই। এসএসসির উদ্দেশে বিচারপতি মন্তব্য, ‘’কোনও রকম ভয় পাবেন না। অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে।’’পাশাপাশি এদিন বিচারপতি বলেন, তিনি সিবিআই-এর কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, জেরায় কোনও ভাবেই মুখ খুলছেন না এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তদন্তে সহযোগিতা করছে না তিনি। বিচারপতি বলেন, সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে মুখ খুলতেই হবে। এবং সেই কাজ করাতে হবে সিবিআই-কে। প্রয়োজনে তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়েও জেরা করতে পারবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, সুবীরেশ ভট্টাচার্য মুখ না খুললে তিনি এমন পদক্ষেপ করবেন, যা আগে কখনও ঘটেনি। এদিন বিকেল ৩টের মধ্যে সিবিআই আধিকারিকদের এই সংক্রান্ত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।আজ অর্থাৎ শুক্রবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct