আপনজন ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের একটি গ্রাম। গ্রামটির নাম করিপ্পো। সুইজারল্যান্ডের টিসিনো রাজ্যে অবস্থিত গ্রামটি। গ্রামটিতে একসময় ৩০০ মানুষ বসবাস করতেন। তবে বনে কাজ করে আর পশুপাখি পালন করে তাদের জীবনধারণ সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বেশিরভাগই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এ অবস্থায় গ্রামটিকে বাঁচাতে সেখানে হোটেল বানানো হয়েছে। পরিত্যক্ত বাড়ির কয়েকটি এখন হোটেলরুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫০ বছরের মধ্যে সুইস পর্বতমালায় অবস্থিত করিপ্পো গ্রামের প্রথম শিশু আড়াই বছরের এর্নেস্তো। কারণ তার মা-বাবা বছরখানেক আগে একটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ডেসিরে ভোয়াটল ও শেরেমি গেরিং করিপ্পোকে একটি হোটেল গ্রামে পরিণত করতে সহায়তা করছেন। তারা একটি রেস্টুরেন্ট চালান আর পুরনো-পরিত্যক্ত পাথর দিয়ে তৈরি বাড়ি ভাড়া দেন। ডেসিরে ভোয়াটল বলেন, হঠাৎ করেই আমরা এই প্রকল্পের খোঁজ পেয়েছিলাম। একসঙ্গে মিলে কিছু করার সুযোগ ছিল এটা। প্রথমে খুব আশ্বস্ত ছিলাম না, কিন্তু তারপরও চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছি। ভালোই চলছে। আশা করছি, এভাবেই চলবে। হোটেলে বর্তমানে ১০টি ঘর আছে। একে বলে আলবের্গো ডিফুসো অর্থাৎ গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে থাকা একটি হোটেল। গ্রামের রাস্তা হোটেলের করিডোর হিসেবে কাজ করে। মূল ভবনে অবস্থিত রেস্টুরেন্টটি রিসেপশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শেরেমি গেরিং বলেন, আমাদের চাকরি আমাদের ভালো লাগা। এই হোটেল, এই রান্নাঘর, আতিথেয়তা, রান্নার উপাদান সব। কঠিন কাজ, কিন্তু আমরা এটা করতে খুব পছন্দ করি। ডেসিরে ভোয়াটল বলেন, দুইজনে মিলে সব কাজ করা সম্ভব নয়। আমাদের সহায়তা করতে কয়েকজন আছেন, যাদের কারণে পরিবেশটা জীবন্ত হয়ে ওঠে। করিপ্পোর নাম ঐতিহ্যের তালিকায় আছে। সে কারণে খুব বেশি পরিবর্তন আনা সম্ভব না। সেখানকার সবকিছু সাধারণ, কিন্তু ভালো মানের। সেখানে একসময় যারা থাকতেন তাদের নামে হোটেলের ঘরগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। বনে কাজ করে আর পশুপাখি পালন করে জীবনধারণ সম্ভব ছিল না বলে বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। করিপ্পো রক্ষায় নিয়োজিত একটি ফাউন্ডেশন সেখানে একটি গ্রাম হোটেল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে। শুরুটা ১০টা পুরনো বাড়ি দিয়ে হয়েছে।
করিপ্পোতে এখনও যারা আছেন তারা মনে করছেন হোটেলটা তাদের গ্রামের জন্য ভালো। যেমন সিলভানা ডাল টিন বলছেন, আমার কাছে ঠিকই মনে হচ্ছে। হোটেল আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। বরং ওটা না থাকলে গ্রামটা একসময় মরে যেত, কারণ এখনও যারা আছেন তাদের তো আর বয়স কমছে না। এর্নেস্তোর কিন্ডারগার্টেন নিচে, গাড়িতে করে যেতে ১৫ মিনিট লাগে। ডেসিরে ভোয়াটল খুশি যে তার ছেলে গ্রামের জীবনে মানিয়ে নিয়েছে। ডেসিরে ভোয়াটল বলেন, এই ছোট জায়গায় সবাই সবাইকে চেনে। এর্নেস্তোরও এটা পছন্দ। সে বলে, আরে ওখানে ভ্যালেন্টিনো লাটে মাকিয়াতো কফি পান করছে! আর সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সে বলে, চাও ম্যাক্স, চাও সিলভানা, সে সবাইকে চেনে। শিগগিরই আরো নতুন দুইটি ঘর তৈরি করা হবে। কারণ হোটেল ভালোই চলছে, অন্তত গরমের সময়। তবে এটা সারাবছরই খোলা রাখা উচিত। ফ্রেঞ্চ ও সুইস এই দম্পতি শীতের সময় একা থাকার ভয় পান না। শেরেমি গেরিং বলেন, শীতের সময় হোটেল ব্যবসার চেয়ে রেস্টুরেন্টটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমাদের সেজন্য আরো সময় লাগবে। আমরা কেবল শুরু করলেও আত্মবিশ্বাসী। এই প্রত্যন্ত এলাকায় যাওয়ার আগে ডেসিরে ভোয়াটল ও শেরেমি গেরিংয়ের একটা সুখী জীবন ছিল। তবে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটুও অনুতপ্ত নন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct