এহসানুল হক, বসিরহাট: তাঁত শ্রমিকদের মজুরি না বাড়ার কারণে অসহায় তার শ্রমিকরা। তার প্রতিবাদে এবার পথে নামল শ্রমিকরা। সেদিন বসিরহাটের বাহাত্তরের খুব দেখালো শ্রমিকরা। একদিকে সুতোর দাম বেড়েছে, অন্যদিকে মজুরি জুটছে যৎসামান্য। দু’দিক থেকে বাড়ছিল লোকসান। ফলে, সুতোর দাম কমানো এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সম্প্রতি বসিরহাটের গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরির প্রায় বন্ধের পথে। এতে বিপদে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার তাঁতশিল্পী। অন্য দিকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বসিরহাট মহকুমা জুড়ে হাসপাতাল, নার্সিংহোমে গজ ও ব্যান্ডেজের সরবরাহে টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট দক্ষিণ, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ এবং বসিরহাট উত্তর বিধানসভা এলাকার বড় অংশের মানুষ ঘরে ঘরে মোটর চালিত তাঁতে গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দু’মাসে এক ‘গাঁট’ সুতোর দাম ৪১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৬৪ হাজার টাকা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁত শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সকলেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এবার সুতোর অভাবে শ্রমিকদের তাঁত ঘরে তালা পড়েছে।এদিন তাঁত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বসিরহাটের মালিকপক্ষের সাথে। এই বিশেষ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট মহকুমা তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক পরিমল মজুমদার সহ একাধিক তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। দেভোগ, মাঝেরপাড়া, বাগানআইট, বসিরহাট পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা যায় কাজ হারিয়ে অসহায় ভাবে দিন কাটছে তাঁতশিল্পীদের। তাঁদের কথায় ক্ষোভের সুর স্পষ্ট। তাঁতশিল্পী আছিয়া বিবি, খালেক মোল্লা, মতিউর রহমান বলেন, আমাদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। একদিকে সুতোর অভাবে তাঁত বন্ধ প্রায়, তার উপর গত ৮-১০ বছর ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। সারাদিন কাজ করে ১৮০-২০০ টাকার বেশি আয় হয় না। প্রতিবাদ করার সাহস পাই না কাজ হারানোর ভয়ে।’
এদিন বিভিন্ন শ্রমিকরা দুলাল চন্দ্র কর বলেন, ‘‘এ আমাদের বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা। তার উপর বয়স হয়েছে, তাই অন্য কাজ জোটানো দায়। তাঁত চালিয়ে যেটুকু রোজগার হত, তা দিয়ে কোনওরকমে সংসার চলত। সুতোর দাম বাড়ায় সমবায় সমিতি এবং ব্যবসায়ীরা সুতো দিতে পারছে না। ফলে, তাঁত ঘরে তালা পড়েছে আমাদের।’’এদিন মালিকপক্ষ সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। কিন্তু কোন সুরাহ মেলেনি বলে জানা গিয়েছে। তার শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করেন ১০০ টাকায় পঞ্চাশ টাকা বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা মানতে চাইনি মালিক পক্ষ। এর বাড়ি পক্ষ থেকে জানা যায় ১৫ শতাংশ ছাড়া তারা বাড়াতে পারবেনা। এমনকি কয়েকটা দিন সময় নিয়েছে বলে জানা। এদিন সম্পাদক পরিমল মজুমদার জানান, আমাদের দাবি যদি না মানে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব। চার বছর আমরা কিছুই পাইনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct