নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা: ফের আইনি ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখলো বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ টি।শিক্ষা সচিব তলবে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন টি নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। নতুন শূন্যপদ তৈরি করে চাকরিহারাদের চাকরি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য । কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেল রাজ্য।সরকার। এদিন নির্দেশনামায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -’ ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত চলছে একাধিক মামলায় । তারমধ্যেই কোর্ট সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগের জন্য আদালতে যে আবেদন জমা হয়েছে, তার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে? তা খতিয়ে দেখতে । এই নির্দেশ অযৌক্তিক কিছু নয়’ । তারপরই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, -’ সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করবে না ডিভিশন বেঞ্চ’ । গত বুধবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে এজলাসে ডেকেছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে আসেন শিক্ষা সচিব।
কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করেনিনি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যেহেতু রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে গেছে, তাই এই মামলার নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা সচিবের বক্তব্য শুনলেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।মেধা তালিকার ক্রম ভেঙে বা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির কথা বলেছিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। গত বুধবার সেই শূন্যপদ তৈরি নিয়ে এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকী শিক্ষাসচিবকে ডেকে পাঠান।অতিরিক্ত শূন্যপদে ‘বেনামি’ আবেদনের কৈফিয়ত তলব করেন তিনি। গত বুধবার রাতেই হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। গত বুধবার অতিরিক্ত শূন্যপদে ‘বেনামি’ আবেদনের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পাশাপাশি কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী যে নতুন পদ তৈরি করার কথা বলেন। তা নিয়ে বিচারপতি বলেন, -’ কার নির্দেশে অযোগ্যদের জন্য শূন্যপদ তৈরি করতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন? কে করল এই বেনামী আবেদন? এটা কার মস্তিষ্কপ্রসূত? আমি তাঁর নাম জানতে চাই’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কিছু দালাল, যাঁরা নিজেদের মুখপাত্র বলছেন, আর কিছু মন্ত্রীর নাম জানি। যাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, কারও চাকরি যাবে না’। গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। ওইদিন এসএসসির তরফে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পুনর্বহালের আবেদন প্রত্যাহার করার অনুমতি চাওয়া হয়। তবে সব দিক খতিয়ে না দেখে আবেদনপত্র প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে চাননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওইদিন আবেদন প্রত্যাহার বিষয়টি নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতি এজলাসে জানিয়েছিলেন , -’ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সামনে রেখে নেপথ্যে কেউ কেউ অযোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে চাইছেন’। রাজ্যের কিছু ‘দালাল’ মুখপাত্র এবং মন্ত্রীর প্রতিও ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি । তিনি বলেন, - ‘আমি কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি, যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।’ আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই আবেদনপত্রগুলি দাখিল করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। গত বুধবার মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি জানিয়েছিলেন -’ এগুলি বেনামী আবেদন। কমিশনকে সামনে রেখে কেউ কেউ খেলছেন’। এর পরই স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কে বিচারপতি বলেছিলেন, -’ আপনাদের আবেদনে আপনারা লিখেছেন যে, পদচ্যুত শিক্ষকরা ২ থেকে ৪ বছর চাকরি করছেন এবং এদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। আপনি কি জানেন এই অভিযোগ জানানোর কোনও সংস্থান আছে কি না ? যদি না থাকে, তা হলে কোথায় অভিযোগ জানানো যাবে?’ যদিও স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘আদালতের সামনে যা তথ্য বা নথি পেশ করা হবে, আইনজীবী হিসাবে তার দায়িত্ব আমার।’ তবে এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়নি।আদালত। বিচারপতি ওইদিন নির্দেশ দেন, -’ আবেদনপত্র দাখিল করার সময় যে ফাইল তৈরি হয়েছিল, সেই ফাইল আদালতে পেশ করতে হবে’। পাশাপাশি তিনি জানিয়েদেন অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির মাধ্যমে অযোগ্যদের চাকরি পেতে তিনি দেবেন না। গত বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, -’ কার নির্দেশে অযোগ্যদের জন্য শূন্যপদ তৈরি করতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন? কে করল এই বেনামী আবেদন? এটা কার মস্তিষ্কপ্রসূত? আমি তাঁর নাম জানতে চাই। এ ব্যাপারে সিবিআই আজ থেকেই তদন্ত করবে’।ওইদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও বলেছিলেন, - ‘আমি কিছু দালাল, যাঁরা নিজেদের মুখপাত্র বলছেন, আর কিছু মন্ত্রীর নাম জানি। যাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, কারও চাকরি যাবে না’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন এই আদালত লড়াই করছে, তখন আদালত জানতে চাইছে কার নির্দেশে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে’।এভাবে ক্ষোভ জানানোর পর বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, বৃহস্পতিবার শিক্ষা সচিব মণীশ জৈনকে আদালতে আসতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রী আসতে চাইলে তিনি স্বাগত। কোনও দালাল আসতে চাইলেও স্বাগত।’ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসেছিলেন শিক্ষা সচিব। তবে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন টি থাকায় দেখা করেননি বিচারপতি। তবে বৃহস্পতিবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখলো সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct