মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: প্রাচীন শহর বর্ধমান, মধ্যযুগে সুবে বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল শরীফাবাদ। মুঘল যুগে ও তার আগে সুলতানি যুগে এবং মধ্যখানে শের শাহ সুরি এই শরিফাবাদ শাসন করেছেন। বর্ধমান শহরের এই খোশবাগান এলাকাটির গিনিস বুকে নাম আছে ,শুধু ডাক্তার পাড়া হিসাবে। এশিয়া মহাদেশ এত ডাক্তার এক জায়গায় চিকিৎসারত অবস্থায় থাকেন, শুধুমাত্র বর্ধমানই তার নজির।বর্ধমান শহরে অলিতে গলিতে অনেক সুদর্শন প্রাচীন মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়, যদিও কিছু কিছু মসজিদ বয়সের ভারে ও মুসলিম জনসংখ্যা না থাকায় বিলুপ্তপ্রায়। খোশবাগান বহু প্রাচীন মহল্লা ।মুঘল যুগে এর নাম ছিল “খুশবাগ”। “খুশ” - ফার্সি অর্থ--- প্রীত , প্রীতকর ,আমদজনক ,সৌখিন। “বাগ “ফার্সি অর্থ --- বাগান, উদ্যান। মসজিদটি তিন গম্বুজ, চারটে মিনার, পুরোটাই খিলেনের কাজ, চুনসুর্কির দেওয়াল, যা দেখতে অনেকটাই প্রাচীন পারস্যের অন্যান্য প্রাচীন মসজিদগুলির হুবাহু একই নিদর্শন।
এই মসজিদের ভিতরে একটি ফার্সি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে এই মসজিদটি ১২২৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে একবার সংস্কার করা হয়েছিল, সংস্কার করেছিলেন জামাদার বক্স। এবং এই প্রাচীন শিলালিপি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এটি নির্মাণ করেছিলেন নবাবদের অনুকূলে জোফান/ জুম্মান শেখ ইমাম নাজেস, কিন্তু শিলালিপি টি এত ভঙ্গুর অবস্থায় থাকায় এবং এর কিছু অক্ষর(নোক্তা, পেস, জবর ইত্যাদী) বিনষ্ট হওয়ায় সাল তারিখ বোঝা যাচ্ছে না, তবে এটুকু অনুমান করা যায় যে এটি প্রাচীন অর্থাৎ মুঘল সাম্রাজ্যের বা কোন সুলতানি যুগের নবাবের আমলে তৈরি হয়েছিল। আনুমানিক বয়স সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ বছর আগে। এই মসজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য আগত রোগীদের সঙ্গে থাকা মহিলারা এই মসজিদে নামাজ পড়ার সুবিধা পান। এই মসজিদ ওয়াকআফ্ বোর্ডের “ইমাম বক্স জামাদার ওয়াকাফ্ স্টেট “এর অন্তর্গত এর ইসি নাম্বার ১০৩৩৮। বোর্ডের রেকর্ড অনুযায়ী সৈয়দ হাবিবুর রহমান, পিতা-মৃত আব্দুস সাত্তার এর মতোয়াল্লী ছিলেন। এই মসজিদ ১৯ ৮৯ সালে দ্বিতীয়বার সংস্কার করে একটি ছাত্রাবাস/ অতিথি নিবাস করা হয়েছে, যেখানে ২৬ টি বেড আছে । ভাড়া ৭০/- টাকা প্রতি দিন। আগামী দিন মহিলাদেরও পৃথক থাকার ব্যবস্থা ও নামাজের ব্যবস্থা হবে বলে জানালেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct