আপনজন ডেস্ক: বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন ফিফা সভাপতি—এটিই সাধারণ রীতি। সেই রীতি মেনে আজ দোহায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তবে ৫৪ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে যতটা না প্রশ্নের মুখে পড়েছেন, তার চেয়ে বেশি প্রশ্নই তুলেছেন ফিফা সভাপতি। বিশ্বকাপ আয়োজক কাতারের সমালোচনাকারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রীতিমতো তোপ দাগিয়েছেন তিনি। কাতারের শ্রমিক অধিকারের সমালোচনা ইউরোপীয় দেশগুলোর ‘ভণ্ডামি’ উল্লেখ করে পশ্চিমা বিশ্বের অতীত ইতিহাসও মনে করিয়ে দিয়েছেন ইনফান্তিনো। সুইজারল্যান্ড ও ইতালির দ্বৈত নাগরিক ইনফান্তিনো ২০১৬ সালে ফিফা সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে ছিলেন ইউরোপীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ উয়েফার জেনারেল সেক্রেটারি। সেই ইনফান্তিনো বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে তাঁর অঞ্চলের অতীত ইতিহাস তুলে চাঁছাছোলা মন্তব্য করেছেন, ‘ইউরোপ আর পশ্চিমা বিশ্ব এখন অনেক কিছু শেখায়। গত ৩ হাজার বছর ইউরোপিয়ানরা বিশ্বজুড়ে যা করেছে, তাতে মানুষকে নীতিকথা শোনানোর আগে আগামী ৩ হাজার বছর তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় ২০১০ সালে। প্রথম দিকে দেশটির বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে আয়োজক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ফিফার তদন্তে কাতারকে নির্দোষ রায় দেওয়ার পর দেশটির বিরুদ্ধে শ্রম শোষণের প্রসঙ্গে সামনে আসে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়োজক হওয়ার পর থেকে কাতারে সাড়ে ছয় হাজার অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে দাবি করে কাতার জানায়, বিশ্বকাপের অবকাঠামো নির্মাণের সময় মারা গেছেন ৩৭ জন, যাঁদের মধ্যে কাজে জড়িত ছিলেন মাত্র ৩ জন। বিশ্বকাপ শুরুর আগের কয়েক মাসে গতি পায় কাতারের রক্ষণশীলতা প্রশ্ন। দেশটিতে সমলিঙ্গের সম্পর্ক এবং প্রকাশ্যে অ্যালকোহল পানের অনুমোদন নেই।
তবে অব্যাহত সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপের এক মাস সবাইকে স্বাগত জানানোর কথা জানায় কাতার। যদিও টুর্নামেন্ট উদ্বোধনের দুই দিন আগে স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল পান আবারও নিষিদ্ধ করা হয়। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত বদল নিয়েও কাতারের সমালোচনা হচ্ছে। ফিফা সভাপতি সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যে সমালোচনার প্রতিটি দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ নিজেকে আমি কাতারের একজন মনে করছি। মনে করছি আরবি, মনে করছি আফ্রিকান, মনে করছি সমকামী, মনে করছি প্রতিবন্ধী, মনে করছি অভিবাসী শ্রমিক। কিন্তু আমি আসলে কাতারি, আরব, আফ্রিকান, সমকামী বা প্রতিবন্ধী নই। তারপরও কেন এমন মনে করছি? কারণ, আমি জানি বৈষম্যের শিকার হলে কেমন লাগে, বুলিংয়ের শিকার হলে কেমন লাগে, অন্য দেশে ভিনদেশি হয়ে থাকার অনুভূতিই বা কেমন। ছেলেবেলায় লাল চুল আর গায়ে দাগের কারণে বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলাম আমি। (সুইজারল্যান্ডে) একজন ইতালিয়ানও ছিলাম। ভেবে দেখুন তো, তখন আপনারা কী করতেন? এসব ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে মেশা দরকার, বন্ধু বানানো দরকার। অভিযোগ করা, আক্রমণ করা বা অপমান করা নয়।’ ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমালোচনা করে ইনফান্তিনোর মন্তব্য, ‘ইউরোপ আর পশ্চিমা কোম্পানিগুলো কাতার থেকে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার আয় করে, তাদের কয়টা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে? কেউ বলেনি। কারণ, আইন বদলালে তাদের আয় কমে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা করেছি। কাতারে কাজ করা এই সব কোম্পানির চেয়ে ফিফার আয় কম।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct