আপনজন ডেস্ক: করোনার জন্য গত দু বছর ধরে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল তবলিগি জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। অবশেষে শুক্রবার ভোপালে বিশ্বব্যাপী প্রচার সমাবেশ শুরু হয়েছে, যাতে ১০ লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা করছেন ইজতেমা কর্তৃপক্ষ। এই সমাবেশের জন্য ভোপালের পিঁপড়া খেরি এলাকায় ৩০০একর জমিতে একটি পৃথক ‘শহর’ তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার শুরু হওয়া ইজতেমা আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে সোমবার। সারাবিশ্ব থেকে আগতদের তবলিগি জামাতের সদস্যদের সুবিধার জন্য ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জলের পাইপলাইন করা হয়েছে। যেখানে একযোগে ১৭ হাজার মানুষ ওযু করতে পারবেন। শুধু ওযু নয়, এই বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ৪৫০০টি অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত দু বছর পর অনুষ্ঠিত এই সমাবেশটি ভোপালের ৭৩তম বিশ্ব তবলিগি ইজতেমা, যেখানে প্রথম দিনেই সারা দেশ থেকে ৪৬৭টি তবলিগ জামাতের দল ইজতেমা প্রাঙ্গণে এসেছেন বলে ইজতেমার কর্মকর্তারা জানিযেছেন তাদের অনুমান। চার দিনের এই তবলিগি জামাতের বিশ্ব িইজতেমায় প্রায় ১০ লক্ষা মানুষ অংশ নেবেন। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাও সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতে তবলিগের বিশ্ব বিইজতেমা এখন শুধুমাত্র ভোপালে অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ইজতেমা প্রাঙ্গণে ফজরের নামাজ আদায় করার পর ইজতেমার বয়ান বা বক্তৃতা শুরু হয় যা চলে দুপুর পর্যন্ত। এখানে জোহর ও জুমার নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। বিকেল সাড়ে চারটায় আসরের নামাজ পড়া হয়। মাগরিবের নামাজের সময় ভোপালের অন্যান্য মসজিদের মতোই নির্ধারিত থাকলেও ঈশার নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তবলিগি জামাতের এই বিশ্ব ইজতেমায় মাংস ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হযেছে। তবে ইজতেমায় আগতদের খাওয়া দাওয়ার জন্য ৩৪টি ফুড জোন তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার পাওয়া যাবে। ফুড জোনে প্রায় দুই লাখ মানুষ একই সঙ্গে খেতে পারবেন। এ বার নন-ভেজ খাবার নিষিদ্ধ করেছে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা কমিটি। তাই সেই নির্দেশ পালনের জন্য এবারে ইজতেমায় কোনও নন-ভেজ বা অামিষ খাবার পাওয়া যাবে না। এছাড়াও, পলিথিন ব্যবহার করা হবে না। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বিদেশি তবলিগি জামাতের দলকে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে বিধানসভার কমিটি। যারা এই সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন তারা ফুড জোনে স্থাপিত দোকানে ৫০ টাকায় পেট পুরে খাবার খেতে পারবেন। আর সকালের প্রাতরাশ বা নাস্তা ২০ টাকায় পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি এক লিটার জলের বোতলের দাম ৬ টাকায় মিলবে। যদি বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিনামূল্যে খাবার এবং জল বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের প্লেট, গ্লাস এবং অন্যান্য ডিসপোজেবল পাত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তবলিগ জামাতের আয়োজক কমিটি।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থারও উন্নতি করা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, সমাবেশস্থল, অ্যাপ্রোচ রোডে সমাবেশে আগতদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। তাদের সাথে তবলিগ জামাতের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককেও এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সভাস্থলে পুলিশের কোনো হস্তক্ষেপ থাকছে না। পুরো ব্যবস্থাপনা স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সাথে স্বেচ্ছাসেবকরাও সক্রিয় ভোপাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে আঁটখেরি পর্যন্ত, পুলিশের সাথে তবলিগি জামাতের স্বেচ্ছাসেবকদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। সমাবেশস্থলের চারপাশে যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য ৪৫টি পার্কিং লট নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে মোতায়েন করা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। রেলস্টেশনের মতো বিমানবন্দরগামী রুটে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোপালে তবলিগ জামাতের ইজতেমা ১৯৪৭ সালে প্রথমে মসজিদ শাকুরে শুরু হয়েছিল। সে সময় মাত্র ১২ থেকে ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। দুই বছর পর তাজ-উল-মসজিদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা লক্ষাধিক হলে এবং মসজিদের প্রাঙ্গণ সঙ্কুচিত হতে শুরু করলে ২০১৫ সালে এটি বিরসিয়া রোডে এন্ট খেদির কাছে ঘাসিপুরায় স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে, ভোপাল জামাত একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। জমায়েতের জন্য প্রস্তুতি দু মাস আগে থেকে শুরু হয়, যার জন্য তবলিগি জামাতের স্বেচ্ছাসেবকরা দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct