নেতার নেতৃত্ব মানিয়া চলা মনুষ্য জাতির স্বভাবজাত ধর্ম। কিছু লোক জাতির নেতা হইবেন। বাকি সাধারণ মানুষ তাহাদের পশ্চাদে ঘুরিবেন, ইহাই দুনিয়াব্যাপী প্রচলিত বিধি। কখনো কখনো নেতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সাধারণ মানুষকে অবোধ বালকের ন্যায় বশীভূত করিয়া দেশ হইতে দেশান্তরে ছুটাইয়া ফিরিয়াছেন, মানুষের দ্বারা মানুষের রক্তে হাত রাঙাইয়াছেন, মানুষ হত্যা করিয়া রক্তের ফোয়ারা দেখিয়া তৃপ্তি লাভ করিয়াছেন। সাধারণ মানুষ সাধারণ মানুষকে সংহারক বনিয়াছেন। যুদ্ধ লইয়া লিখিয়াছেন ইসহাক মাদানি। আজ প্রথম কিস্তি।
নেতার নেতৃত্ব মানিয়া চলা মনুষ্য জাতির স্বভাবজাত ধর্ম। কিছু লোক জাতির নেতা হইবেন। বাকি সাধারণ মানুষ তাহাদের পশ্চাদে ঘুরিবেন, ইহাই দুনিয়াব্যাপী প্রচলিত বিধি। কখনো কখনো নেতার উচ্চাকাংক্ষা সাধারণ মানুষকে অবোধ বালকের ন্যায় বশীভূত করিয়া দেশ হইতে দেশান্তরে ছুটাইয়া ফিরিয়াছেন, মানুষের দ্বারা মানুষের রক্তে হাত রাঙাইয়াছেন, মানুষ হত্যা করিয়া রক্তের ফোয়ারা দেখিয়া তৃপ্তি লাভ করিয়াছেন। দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, চিন ও ভারত উপ মহাদেশের সূদুর অতীত ও দূর অতিতের দিকে দৃষ্টি দিলে এই দৃশ্য ঝাপসা নেত্রেও স্বচ্ছ দেখাইবে। রাজার হুকুম তামিল করিতে বিশেষ সাজে সাধারণ মানুষই সাধারণ মানুষের সংহারক বনিয়াছেন। গৃহহীনদের গৃহ বানাইতে দেশ হইতে দেশান্তরে আলেকজান্ডার বা চেঙ্গিজ খান বা তৈমুর কাহারো দ্বারে উপস্থিত হন নাই। কেহ কহিতে পারেন ইহা সব ইতিহাসের কথা, তবে বলিতে হয় শিক্ষা গ্রহণের জন্যই তো ইতিহাস লেখা হয়। এই ব্যাপারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করা যাইতে পারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ: প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল ছিল ইউরোপ। ২৮শে জুলাই ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় এবং শেষ হয় ১১ নভেম্বর ১৯১৮তে। মূলত ইউরোপ দুটি গোস্টিতে বিভক্ত হইয়াছিল। এক গোষ্ঠীতে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা, ইতালি এবং জাপান। অপর গোষ্ঠীতে ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি এবং তুরস্ক (অটোমান সাম্রাজ্য)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি জোট পরাজিত হইয়াছিল। জয়ী হইয়াছিল ব্রিটেন জোট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মুখ্য কারণ ছিল উপনিবেশিক সম্প্রসারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বের রাজনৈতিক অক্ষায়ণ ছিল মুসলিম অক্ষ এবং খ্রিস্ট অক্ষ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে মুসলিমদের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল করুণ। এক সময় যে মুসলিম অক্ষে সূর্য ডুবিত না তাহা খ্রিস্ট অক্ষে পরিণত হয়। এরপরও মুসলিম অটোম্যান সাম্রাজ্য (উসমানীয় খেলাফত) এর যত টুকু শক্তি বাকি ছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হইলে তাহার মাজা ভাঙিয়া দিয়াছিল ব্রিটেন জোট। এর মাত্র( ১৯৩৯-১৯১৮) ২১ বৎসর পর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধও ঘটিয়াছিল ইউরোপে। এইবারও ইউরোপের দেশগুলি দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়—এক পক্ষ হইল জার্মানি, ইতালি এবং জাপান। আরেক পক্ষ হইল— ব্রিটেন, ফ্রান্স আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই যুদ্ধেও ব্রিটেন পক্ষ জয়ী হইয়াছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসলিম শক্তির কোন ভূমিকাই ছিল না। (অটোমান সাম্রাজ্যের মাজা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভাঙিয়া ফেলা হইয়াছিল।) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর (অর্থাৎ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের পর) ব্রিটেন ও আমেরিকা—এশিয়া ভূখণ্ডকে (যেখানে মুসলিমদের অধিক বসবাস) ডিসটার্ব অঞ্চলে পরিণত করিবার উদ্দেশ্যে ডিপ্লোমেটিক চালের জালে জড়াইয়া ফেলিয়াছে। (এক) ১৯৪৭ সালে ভারত দ্বিখণ্ডিত হইলে প্রাচ্যের দেশগুলি এই অঞ্চলে তাসের খেলা খেলিয়া আসিতেছে। (দুই) ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে বিজিত শক্তি আমেরিকা জোট ইয়াহুদির জন্য ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মান্যতা দেয়। সে যাবৎ এই অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলিয়া আসিতেছে। প্রাচ্যের চিন্তা ধারা “তোমরা আবাদ করিবে আমরা ভোগ করিব।” এই নীতির উপর দাঁড়াইয়া তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের উপর কর্তৃত্ব জমাইয়া আমেরিকা ইউরোপের তথা (ন্যাটোজোটের) আনন্দেই দিন কাটিতেছিল। মধ্যে একদা ইরাক চুঁ চাঁ করায় গদা দিয়া ঘাড় সোজা করা হইয়াছে। ইহা ছাড়া আফগানিস্তান ও সিরিয়ার কথা সর্বজন বিদিত। কিন্তু না, সখ পূরণ করিতে ভবিষ্যতে ঘাটতি হওয়ার আশংকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথী তেল ,গ্যাস ও বিশাল গমশস্য ভাণ্ডারের মালিক রাশিয়ার উপর কর্তৃত্ব জমাইবার উদ্দেশ্যে আমেরিকা ব্রিটেন (তথা ন্যাটো জোট ) বাহানা খুঁজিতেছিল।সব সময় বাহানা পাওয়া যায় না, তৈয়ার করিতে হয়। ইউক্রেন একরূপ ক্রিয়েটেড বাহানার যুদ্ধ ময়দান।(ইউক্রেন যাহা এক সময় সোভিয়েত রাশিয়ার অঙ্গ রাজ্য ছিল তাহা এখন স্বাধীন রাষ্ট্র। তবে ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় লোলুপদৃষ্টি দীর্ঘদিন হতেই ন্যাটোর ছিল বলিয়ায় প্রতীয়মান হয়।)
লেখক বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct