পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সব সময়ই আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে তাকালে আমরা দেখি, এ অঞ্চল এবং গোটা বিশ্ব আজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেমন—উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম। একতরফাভাবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক জবরদস্তির পথে চলছে দেশটি। এই পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে লিখেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। আজ শেষ কিস্তি।
আসিয়ান দেশগুলোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান। ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল প্রায় ৩৫ শতাংশ অগ্রগতি সাধন করেছে। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে আসিয়ান অঞ্চল। ঐক্য ও কেন্দ্রীয় প্রয়াস ধরে রাখার মাধ্যমে এ অঞ্চল বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসিয়ান এবং জাপান সম্মিলিতভাবে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্বর্ণযুগ’ গড়ে তুলছে—এ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা চলে। দুর্ভাগ্যবশত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে রাশিয়া, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মনে রাখতে হবে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সব সময়ই আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে তাকালে আমরা দেখি, এ অঞ্চল এবং গোটা বিশ্ব আজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেমন—উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম। একতরফাভাবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক জবরদস্তির পথে চলছে দেশটি। এই উদাহরণ দেখায়, আমরা এমন একটি পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে, যা আমাদেরকে ক্রমাগতভাবে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি আসিয়ান অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সম্মিলিত অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ইতিহাসের এই অভূতপূর্ব সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমাদের যৌথভাবে কাজ করা উচিত। বিশেষ করে, আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখা যেমন সহজ হবে, তেমনি ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি)’ গঠনের পথ সুগম হবে। জাপান প্রস্তাবিত এফওআইপি উদ্যোগ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কেড়েছে। এফওআইপির পক্ষে ব্যাপক সমর্থন এবং অনুমোদন পেয়েছে জাপান। আগামী দিনগুলোতে এফওআইপির প্রতি আসিয়ান দেশগুলোর অব্যাহত সহযোগিতা বিশেষভাবে কাম্য। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আসিয়ান দেশগুলোর জন্য যে ‘আসিয়ান ইন্দো-প্যাসিফিক (এওআইপি)’ আউটলুক তৈরি করা হয়েছে, তার সঙ্গে এফওআইপি বেশ প্রাসঙ্গিক। বাস্তবিক অর্থে, উভয় উদ্যোগ একই ধরনের মৌলিক ধারণা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। আর এ জন্য আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখা অতি জরুরি। জাপান, আসিয়ানের সকল সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থে আসিয়ান দেশগুলোর প্রতি অব্যাহত সহযোগিতা জোরদারের ব্যাপারে জাপান বরাবরই বদ্ধকরিকর। বিশেষত, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক সহযোগিতা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো বিনিয়োগের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত, জলবায়ু পরিবর্তনসহ স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি ক্ষেত্রে সম্মিলিত সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে এসডিসিতে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অবদান রাখতে জাপান তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা, দুর্যোগ হ্রাস; সর্বোপরি অর্থনৈতিক ফ্রন্টে আসিয়ান এবং জাপানের মধ্যে বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলো আরো প্রসারিত করে অবারিত সহযোগিতাকে অধিকতর জোরদারের ব্যাপারে আমরা অতি আগ্রহী। যেমন—সাপ্লাই চেইনের প্রসারণ, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার ইত্যাদি উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বিশেষ করে যার মধ্যে স্মার্ট সিটি উদ্যোগের ধারণা বিদ্যমান, করার মতো বিষয়গুলোতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। মোটকথা, ডিজিটাল গার্ডেন সিটি গড়ে তোলার মতো দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি সব জাতির জন্য খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা জোরদার করা আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।
আগস্ট মাসে আসিয়ান-জাপান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আসিয়ান-জাপান বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে অফিশিয়াল লোগো উন্মোচন করা হয়। একই সঙ্গে আসিয়ান এবং জাপান যৌথভাবে ‘গোল্ডেন ফ্রেন্ডশিপ, গোল্ডেন অপারচুনিটিস’ ক্যাচফ্রেজ (বিশেষ সম্পর্ককে নির্দেশ করতে ব্যবহূত টাইটেল) ঘোষণা করে। এ ঘোষণা উভয়ের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আসিয়ান-জাপান সম্পর্ক সর্বসাধারণ কর্তৃক সমর্থিত ও স্বীকৃত। বছরের পর বছর এই সম্পর্ক আস্তা ও বিশ্বাসের প্রতিক হিসেবে দ্যুতি ছড়িয়ে চলেছে। ঘোষিত ক্যাচফ্রেজ তারই ইঙ্গিত। সত্যিকার অর্থেই এই ক্যাচফ্রেজ ‘সোনালী’ সম্ভাবনায় পূর্ণ। ২০২৩ সাল হবে জাপান এবং আসিয়ান উভয়ের জন্যই যুগান্তকারী বছর। বছরটিতে আসিয়ান-জাপান মৈত্রী ও সহযোগিতার ৫০তম বছরকে বরণ করার পাশাপাশি জাপানে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষ্যকে স্মরণে রেখে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনসহ আসিয়ান দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমি আন্তরিকভাবে জাপানে স্বাগত জানাই এবং একই সঙ্গে আসিয়ান-জাপানের প্রতি ধারাবাহিক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রাখার জন্য শীর্ষ সম্মেলনে আগত নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান। (সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct