পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সব সময়ই আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে তাকালে আমরা দেখি, এ অঞ্চল এবং গোটা বিশ্ব আজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেমন—উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম। একতরফাভাবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক জবরদস্তির পথে চলছে দেশটি। এই পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে লিখেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। আজ প্রথম কিস্তি।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে অবস্থান করছি। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিগত তিন বছর আসিয়ান-বিষয়ক শীর্ষ বৈঠকে বসা সম্ভব হয়নি। সে অর্থে দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে পুনরায় এক জায়গায় জড়ো হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আসিয়ান নেতারা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চলতি বছর মার্চের পর দ্বিতীয়বার কম্বোডিয়া সফর করতে পেরে এবং আসিয়ানের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যুক্ত হতে পারার সুযোগ পেয়ে চরম উচ্ছ্বসিত আমি। বলা বাহুল্য, আসিয়ান চেয়ার কম্বোডিয়ার মহত্ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণেই এই বছর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সামদেচ আক্কা মোহা সেনা পাদেই টেকো হুন সেনের নেতৃত্বে কম্বোডিয়া শুধু আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গেই নয়, এতদাঞ্চলের বাইরের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধন করেছে, যা আসিয়ান চেয়ার হিসেবে দেশটির জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। উল্লেখ করার মতো বিষয়, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নেতাদের একত্রিত করার জন্য কম্বোডিয়া এমন একটি ক্ষেত্র, ফোরাম সৃষ্টি করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার কাজকে দেশগুলোর জন্য সহজ করে তুলেছে। আসিয়ান চেয়ার হিসেবে মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান নাজুক পরিস্থিতি এবং প্রতিকূল হয়ে ওঠা বেশ কিছু ইস্যু সমাধানের বিষয়ে দৃষ্টি রেখেছে কম্বোডিয়া, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির এই অগ্রণী ভূমিকার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে কম্বোডিয়ান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ কম্বোডিয়ার আপামর জনগণের বিবেচনার প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
আগামী বছর জাপান এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী সামনে রেখে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক যে কোনো পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছে জাপান। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং অংশীদারত্ব আরো জোরদার করার ব্যাপারে জাপান সংকল্পবদ্ধ। শুধু জাপান এবং কম্বোডিয়ার জন্যই নয়, জাপান এবং আসিয়ানের জন্যও আগামী বছরগুলো গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে বলে জাপান বিশ্বাস করে। এ কথা সর্বজনবিদিত, জাপান হলো আসিয়ানের প্রাচীনতম বন্ধু। এই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর আসিয়ান-জাপান বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ৫০তম বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করব আমরা। এ সংবাদ পরমানন্দের। আমি যখন বিগত অর্ধশতাব্দীর সহযোগিতামূলক পথচলার ইতিহাসের দিকে তাকাই, তখন এই সময়কালে আসিয়ান দেশগুলোর হাত ধরে অর্জিত উন্নয়নের জন্য প্রশংসা না করে পারি না। আমি গর্বিত এই কারণে যে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশ্নে আসিয়ানের সঙ্গে জাপান পা মিলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে, আসিয়ানের একটি উদ্যোগকে জাপান শুরু থেকেই সাধুবাদ জানিয়ে আসছে—সংযুক্তি কর্মসূচি। আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ স্বল্পোন্নত, সেসব দেশের তরুণ কূটনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। সন্তোষজনক বিষয় হলো, এই কর্মসূচির অধীনে বহু স্নাতক বর্তমানে নিজ নিজ সরকারে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। এই চিত্র বেশ উৎসাহজনক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct