স্বপ্ন পূরণ
শংকর সাহা
জানালার একপাশে দূরবীন নিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে অর্ক ? বইকে সঙ্গী করেই বেড়ে ওঠা তার। দুচোখে স্বপ্ন বড়ো হয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানী হওয়া।অর্কের জীবনের একমাত্র সঙ্গী ও বন্ধু তার মা । ছোটো থেকে কাছের বলতে সেই মাকেই পেয়েছে সে। তাই তার স্বপ্নগুলোকে শুধুই মাকে জানিয়েছে সে।অর্কের দূরবীন নিয়ে ভাবনা চৌধুরী বাড়ির কেউই পছন্দ করেন না । সেইদিন মোক্ষদারানী (অর্কের ঠাম্মা) অর্কর দিকে চেয়ে বলে,” এই ছেলে সারাদিন সেই দূরবীন নিয়ে যে কিসব ভাবে এতো? এই ঘরে থেকে বিজ্ঞানীর স্বপ্ন !যেন আকাশ ছোঁয়া কল্পনা মাত্র” ঠাম্মার কথায় মন ভেঙ্গে যায় অর্কের। ছুটে যায় মার কাছে। মাকে জড়িয়ে বলে, “ মা, আমি কি বিজ্ঞানী হতে পারব না ..?” “পারবি বাবা, স্বপ্ন দেখ? জীবনে এই স্বপ্নই যে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের বাঁচিয়ে রাখে “ অর্ক একমনে আবারো দূরবীন নিয়ে ভাবতে বসে । সেদিন হেমন্তের সকালটা একটু অন্যরকম ছিল।পুজোর ঘর থেকে বেরিয়ে মোক্ষদারানী বৈঠকখানায় বসে আছন। হাতে চায়ের কাপ। পাশে বসে আছেন ভবেন চৌধুরী (অর্কের দাদু)। হাতে খবরের কাগজ। খবর পড়তে পড়তে হঠাই চমকে উঠেন তিনি। পত্রিকার চার নং পাতায় সরকারী বিজ্ঞাপন। এবারের বিজ্ঞানমঞ্চের প্রদর্শনীতে রাজ্যের মধ্যে মেধাতালিকায় জেলার মধ্যে শুধুমাত্র নাম উঠেছে অর্কের। “বউমা, এদিকে এসো দেখবে? আমাদের অর্কবাবুর নাম উঠেছে বিজ্ঞান মঞ্চের সেরাদের মাঝে?” রান্না ঘর থেকে স্নেহময়ী ছুটে আসে। পত্রিকাটি হাতে নিয়ে দেখে ছেলের নাম। কাজের মেয়েটি তখন পড়ার ঘর থেকে ডেকে আনে অর্ককে। অর্ক ঘরে ঢুকতেই স্নেহময়ী ছেলের দিকে চেয়ে বলে,” দেখ অর্ক, তুই পেরেছিস । আজ জেলার মধ্যে শুধু তোরই নাম উঠেছে রাজ্যস্তরে।“ “কি দাদুভাই, তোমার সেই দূরবীন কোথায় দেখি?” অর্কের দিকে চেয়ে মোক্ষদারানী হেসে বলে। অর্ক মার দিকে চেয়ে থাকে । স্নেহময়ী বলে, “ মা, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের স্বপ্নটুকুই যে বাঁচায়। অর্ক না হয় স্বপ্নটুকু নিয়েই থাকুক” মোক্ষদারানী স্নেহময়ীর কথা বুঝতে পারেন। “অর্ক,ঠাম্মাকে দূরবীনটি এনে দেখাও আর গুরুজনদের প্রণাম করবে...” অর্ক নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে থাকে মার দিকে...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct