আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে আশির দশক থেকে মূলত সংখ্যালঘু সমাজে এক উজ্জ্বল শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে আসছে হাওড়ার খলতপুরের আল আমীন মিশন। যদিও ইতিমধ্যে আল আমীন মিশন তাদের ক্যাম্পাস আর শুধু খলতপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বিস্তৃত করেছে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। একমনকী বিহারের পাটনাতেও আল আমীন মিশনের শাখা রয়েছে। সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম মিশনের নেতৃত্বে রাজ্যের মধ্যে এখন এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে আল আমীন মিশন। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এর (ইউজি)-এ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে আল আমীন মিশনের পড়ুয়ারা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২ সালে আল আমীন মিশন থেকে ৫০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া নিট উত্তীর্ণ হয়েছে। রাজ্য তথা দেশে নিট (ইউ জি)-এ সাফল্যের নিরিখে অগ্রণী আল-আমীন মিশন ২০২২ সালে আগের সমস্ত সাফল্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই উৎসাহে মিশনের মূল শাখা খলতপুর থেকে নিটে সফল ছাত্র-ছাত্রীদের গত ৯ নভেম্বর সংবর্ধিত করা হয়। উল্লেখ্য, মিশনের সফল পাঁচশোর বেশি পড়ুয়াদের মধ্যে এমবিবিএস-এর প্রথম কাউন্সেলিংয়ে ভর্তি হওয়া খলতপুরের ৫১ জন ছাত্র ও ২১ জন ছাত্রীকে সংবর্ধিত করা হল। খলতপুর ক্যাম্পাসের বয়েজ ও গার্লস বিভাগে আয়োজিত পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে স্মারক ও উপহার সামগ্রী তুলে দেওা হয়। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনপত্রে লেখা হয়—‘তোমরা, আমাদের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, তীব্র অধ্যবসায়কে সম্বল করে আল-আমীনের এবং তোমাদের পরিবারের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে চলেছ।
এ-বছর সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় তোমাদের অভাবনীয় সাফল্যে আমরা গর্বিত। তোমাদের জন্যে রইল আমাদের প্রাণের শুভেচ্ছা। সর্বময় আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক তোমাদের ওপর।’ মিশনের সুপারভাইজার সেখ মারুফ আজম তার স্বাগত ভাষণে ছাত্র-ছাত্রীদের গড়ে ওঠার পেছনে তাদের পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করেন। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তোমরা হয়তো জানোই না তোমাদের ভবিষ্যৎ কী? কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে তোমরা প্রত্যেকেই সমাজ ও দেশের জন্য স্পেশাল কিছু হয়ে উঠবে। মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম তাঁর ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করে উপস্থিত পড়ুয়াদের জানান মিশনের আবাসিকদের মতো সৌভাগ্য ছিল না তার। তাঁকে বিভিন্ন টিউশন মাস্টারের কাছে পড়তে যেতে হত। রামকৃষ্ণ মিশনের সেরকমই এক মহৎপ্রাণ শিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই আল-আমীনের প্রতিষ্ঠা বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ডাক্তারি এবং সে তুলনায় একটু কম পরিমাণে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মিশনের ধারাবাহিক সাফল্য অবশ্যই উল্লেখনীয়। কিন্তু এটাও বাস্তব ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের পরিচালনা করে থাকেন সিভিল সার্ভেন্টরা। সেকারণে আগামীতে মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করা হবে না, বেশি বেশি পরিমাণে সিভিল সার্ভিসে আসার জন্য তিনি উৎসাহিত করা হবে। লক্ষ্য হবে ডবলিউবিসিএস, আইএএস গড়ে তোলা। তিনি বলেন, সরকারি আধিকারিকদের মাধ্যমে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, অসহায় মানুষ উপকৃত হয়ে থাকেন। তারা এই সব উপকৃত মানুষের অন্তরের ছোঁয়া, আশীর্বাদ ও দোওয়ায় প্রতিনিয়ত অজান্তেই স্নাত হন। অন্যান্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উলুবেড়িয়ার এসডিও শমীক কুমার ঘোষ, উদয়নারায়ণপুরের বিডিও প্রবীর কুমার শিট, উলুবেড়িয়ার ট্রেজারি অফিসার কাজি খলিল উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার সেখ ফজলুর রহমান প্রমুখ। তারা প্রত্যেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে আল-আমীনের সাফল্য ও অবদানের গুরুত্ব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমাজ তথা রাজ্য ও দেশের উন্নয়নে ও সমৃদ্ধিতে অগ্রণী হতে অনুপ্রাণিত করেন। উল্লেখ্য, এই শাখায় আগের দিন ৮ নভেম্বর সিরাতুন্নবি অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা কেরাত, নাত-এ-রসুল, ইসলামি কুইজে অংশ গ্রহণ করে। মুহাম্মদ সা.-এর জীবনাদর্শ বিষয়ের মূল আলোচক ছিলেন মাওলানা মহম্মদ ইলিয়াস।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct