টানা ২৭ বছর ধরে গুজরাত শাসন করছে বিজেপি। তার মধ্যে গত ৮ বছর চলছে ডাবল ইঞ্জিন সরকার। ডাবল ইঞ্জিনের গাড়ির সময়মতো সার্ভিস করা হয় না বা ইঞ্জিন অয়েল বদলানো হয় না। তাই সাইলেন্সার দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, যা থেকে প্রচুর দূষণ (রাজনৈতিক ও সামাজিক) ছড়াচ্ছে। আসলে ডাবল ইঞ্জিন সরকার মানে হল, কেউ ভুল ধরার নেই, কেউ সমালোচনা করার নেই, কেউ প্রশ্ন করার নেই। কেউ বলবে না রাজা তোর কাপড় কোথায়? সকলি তোমারই ইচ্ছা। গুজরাত নিয়ে লিখেছেন মুদাসসির নিয়াজ। আজ শেষ কিস্তি।
তাই ৬ বছর আগে পোস্তা নিয়ে ইট ছুড়ে এখন মোরবিকাণ্ডে পাটকেল খেতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, তিনি মোরবি দুর্ঘটনার সময় গুজরাতেই ছিলেন। তা সত্ত্বেও তৎক্ষণাৎ স্বজনহারাদের কান্না তাঁর কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি বা তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের পাশে দাঁড়ানো বা শোক, সমবেদনা কিংবা সান্ত্বনা জানানোর প্রয়োজন বা তাগিদ অনুভব করেননি। সেই কঠিন সময়টা দিয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের রংবাহারি আলোকজ্জ্বল মঞ্চে।প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কোনও রকম টেন্ডার ছাড়াই বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী জয়সুখভাই প্যাটেলের ওরেভা গ্রুপকে মোরবি সেতু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অথচ এই কাজে তাদের কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। তারা মূলত ঘড়ি এবং ক্যালকুলেটর তৈরি করে। তাই ব্রিটিশ আমলের তৈরি শতাব্দী প্রাচীন এই সেতুতে মরচের উপর নাম কা ওয়াস্তে রঙের পোঁচ দিয়েই সেরেছে সংস্কারের কাজ এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই খুলে দেওয়া হয় সেতু। তাছাড়া ১২৫ জনের ক্যাপাসিটি থাকা সত্ত্বেও সেদিন ৫০০রও বেশি টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। অর্থাৎ অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই সেদিন ভেঙে পড়েছিল মোরবি সেতু এবং যার জেরে প্রায় ১৫০ মানুষের অকালমৃত্যু হল। শিশুসহ এতগুলো জলজ্যান্ত মানুষ জলে ডুবে মারা গেল। এককথায়, চূড়ান্ত অনিয়ম। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্ত করতে সময় লাগবে। অর্থাৎ মাচ্চু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়লেও তদন্ত ঝুলেই থাকবে। কারণ, শিরে সংক্রান্তি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কার দোষ বা কার অন্যায় – সে বিচারে না যাওয়াই মঙ্গল। না হলে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চেপে কী যে পরিণতি হবে তার ঠিক নেই। তাই ধীর লয়ে চলুক তদন্ত। যাতে সাপও না মরে, লাঠিও না ভাঙে। অর্থাৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীকে খেপালেও চলবে না, আবার শোকাতুর পরিবারগুলোকে কিছু আর্থিক দাক্ষিণ্য দিয়েই এ যাত্রায় কাজ সেরে নেওয়া হবে।
গুজরাতে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ওই রাজ্যে দেদার বরাদ্দ হয়। মোচ্ছবও হয় অকাতরে। উন্নয়নের অছিলায় টাকা দেওয়ার জন্য ‘গৌরী সেন’ সদাই উদারহস্ত। তবে ‘গাজর’ ঝোলানো হয় মূলত নির্বাচনের মুখেই। তারই জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয় ভোট ঘোষণা। হিমাচল প্রদেশে নির্বাচন হলেও অকারণে গুজরাতে ভোট পিছিয়ে করা হল ১ ও ৫ ডিসেম্বর। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা এবং সে সবের শিলান্যাস ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের হিড়িক চলছে। ভোটের আগে কল্পতরু সেজেছেন মোদিজী। তবে, এবার কিছুটা বেসুরো হয়েছে নীতি আয়োগ। কংগ্রেস জমানার যোজনা কমিশনের নাম বদলে ২০১৫ সালে নীতি আয়োগ করেছিলেন মোদিজী। তাঁরই হাতে তৈরি এই আয়োগ মাত্র কদিন আগে ভর্ৎসনা করে কেন্দ্র সরকারকে বলেছে, মুড়ি-মুড়কির মতো প্রকল্প ঘোষণা করে চমক না দিয়ে পূর্বঘোষিত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে সমাধা করা হোক। কেন ৪৯৪টি প্রকল্পের ৫লক্ষ কোটি টাকার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই শুরু হয়েছে একের পর এক নয়া প্রকল্পের ঘোষণা? অর্থাৎ বাপেরও বাপ আছে, তাই নীতি আয়োগও বিজেপির খেলা ধরে ফেলেছে। তাই বেশি কেরামতি দেখাতে বারণ করেছে কেন্দ্রীয় আর্থিক সংস্থাটি। (সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct