সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: রাজ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে। নিত্যদিনই রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। কোনও কোনও দিন তো মৃত্যুর সংখ্যা একাধিক হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কলকাতা বাদ দিয়ে বাংলার ১২৭টি শহরের থাকা পুরস্বাস্থ্য বিভাগের যাবতীয় কাজকর্মকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে নিয়ে আসা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলায় নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি রাতারাতি গৃহীত হয়েছে এমন নয়। ২০১৯ সাল থেকেই কলকাতা বাদ দিয়ে বাংলার সব শহরের পুরস্বাস্থ্য বিভাগকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে আনার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা শুধু পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এর জেরে লাভবান হতে পারেন পুরস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকেরা। কেননা এক্ষেত্রে তাঁদের বেতন ও অনান্য সুযোগসুবিধা রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের বেতন ও সুযোগসুবিধার সমতুল্য হয়ে যাবে বলে কিছু কিছু মহল থেকে অনুমান করা হচ্ছে।রাজ্যের জেলায় জেলায় থাকা পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খুঁটিনাটি সব কিছুতেই নজরদারি থাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা স্বাস্থ্যদফতরের। তবে পুরসভাগুলিতে পৃথক স্বাস্থ্যবিভাগ থাকে। এবার সেই ‘আরবান হেলথ’ বা পুর এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও চলে আসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা স্বাস্থ্যদফতরের অধীনে। এর ফলে কলকাতা বাদে রাজ্যের ১২৭টি পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের নিয়ন্ত্রণ আসতে চলেছে সরাসরি স্বাস্থ্যভবনের হাতে। বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি থেকে শুরু করে ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুর স্বাস্থ্যবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সেখানে একাধিক বিভাগের হস্তক্ষেপ থাকায় অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফল ভুগতে হয় নাগরিকদের। এবারই ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এই সমস্যায় জেরবার হতে হচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্যদফতরকে। রাজ্যের স্বাস্থ্যদফতর এবং পুরসভাগুলির দেওয়া তথ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যাচ্ছে, যা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। পাশাপাশি পুরসভা এলাকাগুলিতে পুরস্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে হাজারো অভিযোগও রয়েছে। এই সব সমস্যার সমাধান হিসাবে কলকাতা বাদ দিয়ে বাকি ১২৭টি শহরের পুরস্বাস্থ্য বিভাগকে সরাসরি স্বাস্থ্যদফতরের অধীনে আনা হচ্ছে।বর্তমানে রাজ্যের পুরস্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখভাল করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে থাকা সুডা বা স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি। আবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস থেকেও পুরস্বাস্থ্যের জন্য অর্থবরাদ্দ হয়। পুরসভা ও কর্পোরেশনগুলির নিজস্ব বাজেট থাকে পুরস্বাস্থ্য বিভাগের জন্য। এতগুলি আলাদা আলাদা ‘কমান্ড’ থাকায় কাজের সমস্যা হয়। এসব মাথায় রেখেই এবার পুরস্বাস্থ্য বিভাগকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে আনা হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের পুরসভাগুলির স্বাস্থ্যবিভাগের যাবতীয় কাজকর্ম যেমন স্বাস্থ্যদফতরের আধিকারিকেরা দেখভাল করবেন তেমনি নজরদারিও থাকবে। বর্তমানে রাজ্যের সবক’টি পুরসভা মিলিয়ে ৪৯৯টি ইউপিএইচসি বা পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অনুমোদন আছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৪৬১টি। মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, টিকাকরণের পাশাপাশি জ্বরজারি, পেটের সমস্যা সহ সব সাধারণ অসুখবিসুখের চিকিৎসা হয় এই কেন্দ্রগুলিতে। এছাড়া, জনগোষ্ঠীতে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ তথা সুগার, প্রেসার, স্ট্রোক, ক্যান্সার, মানসিক সমস্যা ইত্যাদির প্রাথমিক রোগনির্ণয়, প্রভাব ও পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ করার কাজ হয় এখানে। পুর স্বাস্থ্যবিভাগে আরবান হেলথ অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, ক্লার্ক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা থাকেন। নয়া নিয়মে তাঁরা তাঁদের মতোই কাজ করবেন। কিন্তু কী কী কাজ করবেন, কীভাবে করবেন, কোনগুলিকে প্রাধান্য দেবেন, কোন নিয়ম মানবেন—এসব রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকেই ঠিক করে দেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct