নভেম্বরের ৬ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মিসরের পর্যটন নগরী শার্ম এল-শেখে। প্রথমবার ১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে এ সম্মেলন হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এটি হয়ে থাকে। এযাবৎ ২৬টি জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে। সর্বশেষ ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের রূপরেখার আলোকে এই বিশেষ প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোস্তফা সারোয়ার। আজ শেষ কিস্তি।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে দোহায় ১৮তম জলবায়ু আলোচনায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য আলোচনা হয়। তবে সত্যিকারের উদ্যোগটি ঘটে ২০১৩ সালের জলবায়ু আলোচনায়। সেখানে সব পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা কমিয়ে আনা এবং বন্ধ করার জন্য ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম (ডব্লিউআইএম) ফর লস অ্যান্ড ড্যামেজ নামক একটি ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে একমত হয়। আর ২০১৫ সালে ১৯তম জলবায়ু আলোচনায় প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল-৮–এ লস অ্যান্ড ড্যামেজের আওতায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনার একটি কার্যকর ধারণা দিয়েছে। আমরাও অনেক আশাবাদী হয়ে উঠলাম। তবে পরের জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে কার্বন উদ্গিরণের জন্য দায়ী ধনী এবং সম্পদশালী দেশগুলো ক্ষয়ক্ষতির ঐতিহাসিক দায় তাদের ঘাড়ে আসতে পারে ভেবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সিংয়ের আলোচনা আর বেশি দূর এগোতে দেয়নি। তা সত্ত্বেও ২৬তম জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম তার সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সিংয়ের দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করে। যদিও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নের এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো গ্রহণ করেনি, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় দুই বছর সময়সীমার গ্লাসগো আলোচনা (গ্লাসগো ডায়ালগ) চালু করেছে। যার লক্ষ্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা কমিয়ে আনা এবং বন্ধ করার উপায় বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা নিশ্চিতের জন্য সান্তিয়াগো নেটওয়ার্কে অর্থায়ন করার বিষয়ে আলোচনা। এ ছাড়া আশার কথা হল ডব্লিউআইএমের কার্যকরী কমিটি পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় (২০২৩-২৭) অভিবাসন, বাস্তুচ্যুতি এবং পরিকল্পিত পুনর্বাসনে সহায়তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সিংয়ের বিষয়ে এযাবৎ দৃশ্যমান বড় কোনো অগ্রগতি না হলেও এ ইস্যু আগামী ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হবে। লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সিংকে একটি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য সূচি হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ৪০০–এর বেশি সংগঠন গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের দায়িত্ব হলো মিসরের সম্মেলনে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি এবং তা থেকে উদ্ভূত বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলার আলোচনায় কয়েকটি বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করা। এর মধ্যে রয়েছে যেমন ভবিষ্যতের সব জলবায়ু আলোচনায় লস অ্যান্ড ড্যামেজকে যেন একটি একক এবং স্থায়ী আলোকসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এটি দেখভাল করার জন্য যেন সুনির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নকে যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়। জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতিকে অন্তর্ভুক্ত করে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি কমানো এবং অভিবাসনকে নিরাপদ করার জন্য বৈশ্বিক নীতির যেন পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। সান্তিয়াগো নেটওয়ার্ককে যেন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে তারা ক্ষয়ক্ষতি এবং অভিবাসনের তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করে অভিবাসন বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে পারবে। আমাদের দেশে যাঁরা জলবায়ু–সংকটে ভুগছেন, তাঁরা এই সংকটের জন্য দায়ী নন। আমাদের জোরালোভাবেই প্রশ্ন তোলা উচিত, উন্নত দেশগুলোর বারবার জলবায়ু–ন্যায্যতাকে অস্বীকার করার নৈতিক দিকটিকে নিয়েও। তারপরও আমরা আশাবাদী যে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন ভারত বা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কার্যকর একটি আলাদা তহবিল সৃষ্টির বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।
(সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct