নভেম্বরের ৬ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মিসরের পর্যটন নগরী শার্ম এল-শেখে। প্রথমবার ১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে এ সম্মেলন হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এটি হয়ে থাকে। এযাবৎ ২৬টি জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে। সর্বশেষ ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের রূপরেখার আলোকে এই বিশেষ প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোস্তফা সারোয়ার। আজ প্রথম কিস্তি।
পরিবেশবিদ সহ অন্যদের দৃষ্টি এখন ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের দিকে। নভেম্বরের ৬ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মিসরের পর্যটন নগরী শার্ম এল-শেখে। প্রথমবার ১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে এ সম্মেলন হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এটি হয়ে থাকে। এযাবৎ ২৬টি জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে। সর্বশেষ ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। বৈশ্বিক এই জলবায়ু সম্মেলনগুলো হয়ে থাকে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের রূপরেখা/ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) রূপরেখার আলোকে। তবে এই বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি তথ্য–উপাত্তসমৃদ্ধ সর্বশেষ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের রূপরেখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত প্রথম আর্থ সামিট ও ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আর্থ সামিটের (জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলন) সিদ্ধান্তের ফলে। তাই বলা যায়, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মূল কাজ বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা করার ব্যাপারে ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনেই কিছু না কিছু নতুন বিষয় সামনে আসে। এযাবৎ প্রায় দুই ডজন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে। তবে মোটাদাগে বলা যায়, প্রথম দশকে সমঝোতার মূল বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাকে থামিয়ে বা কমিয়ে দেওয়া বা প্রশমন (মিটিগেশন)। কিন্তু দ্বিতীয় দশকে এসে আইপিসিসি চতুর্থ মূল্যায়ন রিপোর্ট পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিল যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শুধু মিটিগেশন যথেষ্ট নয়। এর পর থেকে আলোচনায় মিটিগেশনের পাশাপাশি গুরুত্ব পেল জলবায়ু অভিযোজন (অ্যাডাপটেশন)।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে উন্নত বা সম্পদশালী দেশগুলো এ ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেকেই অভিযোজন করতে পারে না সম্পদের অপর্যাপ্ততার কারণে। কখনোবা অভিযোজন করার পরও ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার দেশগুলোর অভিযোজনের জন্য এর আগে অ্যাডাপটেশন ফান্ড, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ইত্যাদি নামে তহবিল দিতে চেয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত সম্পদশালী দেশগুলোর জোট। ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থের খুব সামান্যই দিয়েছে বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলে। ফলে প্রান্তিক জাতি/দেশ সমূহ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড নামক আলাদা তহবিল চেয়ে আসছে উন্নত দেশগুলোর কাছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ বলা হয়। যেমন ঘূর্ণিঝড়, খরা, তাপপ্রবাহ, মরুকরণ, লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি। সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও অর্থনীতিবহির্ভূত ক্ষয়ক্ষতি, যেমন পরিবেশ বা প্রতিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি, বাস্তুচ্যুতির কারণে সামাজিক ও মানসিক ক্ষতি—এসবই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের মধ্যে পড়ে।কৃষকদের জন্য বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতি মোকাবিলায় শস্যবিমা, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, জীবিকা পুনরুদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ সহায়তা ইত্যাদি সবই সম্ভব হবে লস অ্যান্ড ড্যামেজের ফান্ড থেকে। এমনকি এই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসন এবং নতুন জীবিকা অনুসন্ধানে সহায়তা করা যাবে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেই ২০০৭ সালে ১৩ম জলবায়ু সম্মেলনে বালি কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে লস অ্যান্ড ড্যামেজ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় আসে। পরে ২০১০ সালে ১৬তম জলবায়ু আলোচনায় লস অ্যান্ড ড্যামেজের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct