সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: কেষ্ট নিজে তো জেলে গিয়েছেন, এবার সঙ্গে আরও কিছু উর্দিধারীকেও ঢোকাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। এমন সম্ভাবনাটাই দেখা দিল তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া লটারিকাণ্ডে। কেন না ইডি লটারিকাণ্ডে তদন্তে নেমে এবার এমন কিছু পুলিশ আধিকারিকের সন্ধান পেয়েছেন যারা নিজেদের কালো টাকা সাদা করেছেন এই লটারির মাধ্যমে। এমনই বিস্ফোরক তথ্য এসেছে ইডি আধিকারিকদের হাতে। তাঁদের দাবি, রাজ্য পুলিশের ওই সব আধিকারিকেরা নির্দিষ্ট একটি লটারির মাধ্যমে তাঁদের আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আয়বহির্ভূত কালো টাকা সাদা করেছেন। ওই সব পুলিশ আধিকারিকদের তালিকায় নানা পদমর্যাদার আধিকারিক রয়েছেন। আছেন আইসি, ওসিরাও। এরা আদৌ টিকিট কিনে পুরস্কার জিতেছিলেন, নাকি অন্য কারও পুরস্কার জেতা টিকিট জোগাড় করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন তার খোঁজই এবার শুরু করেছেন ইডির আধিকারিকেরা।গতবছর একটি লটারি সংস্থার ওয়েবসাইটে বীরভূমের ডাকসাইটে তৃণমল নেতা তথা দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ১ কোটি টাকা জেতার ছবিসহ বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। কীভবে তিনি ওই টাকা জিতলেন তা নিয়েঅ এখন তদন্ত শুরু করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী এজেন্সির আধিকারিকেরা এটাই দেখছেন যে কেষ্ট সত্যিই লটারি জিতেছিলেন নাকি এই লটারির মাধ্যমে নিজের কালো টাকা সাদা করেছেন। সেই তদন্তে নেমে তাঁরা জেনেছেন, একটি লটারি সংস্থা কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তাঁদের সঙ্গে ওই লটারি সংস্থার কর্ণধারদের একাংশের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতাও গড়ে উঠেছে। আর তাঁর সুবাদেই তাঁরা নিজেদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগও পেয়ে গিয়েছেন। উল্লেখ্য, সিবিআই ও ইডি একযোগে গরু পাচার ও কয়লা পাচার কাণ্ডের তদ ন্ত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর সেই তদন্তে নেমেই তাঁরা জানতে পেরেছেন যে এই চক্র নির্বিঘ্নে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাচারকারীরা রাজ্যের কিছু পুলিশ আধিকারিকদের নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা ভেট করতেন। ইডির ধারনা সেই সব পুলিশ আধিকারিকেরাই এখন লটারির মাধ্যমে নিজেদের কালো টাকা সাদা করেছেন।ইডির আধিকারিকেরা এটাও জানতে পেরেছেন যে লটারির মাধ্যমে কালো থেকে সাদা করে নেওয়া ওই টাকার একটা বড় অংশ এখন রাজ্যেরই কলকাতা, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, বারাসত, নিউটাউনের মতো এলাকায় বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটে খাটছে। বাকি টাকা তাঁরা গচ্ছিত রেখেছেন তাঁদের ঘনিষ্ঠদের কাছে। এই বিপুল অর্থ রোজগার করেছেন কোন কোন পুলিশ আধিকারিক তার নামের তালিকা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে চলে এসেছে বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের। তাঁদের এটাও দাবি যে, রাজ্যের যে সব পুলিশ আধিকারিক ও অফিসারদের যে অংশ এই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা নির্দিষ্ট একটি লটারিতে পুরস্কার পেয়েছেন, আর সেটাও এক কোটি টাকার নীচে। ফলে তাঁদের ছবিসহ বিজ্ঞাপন না বেরনোয় জানা যায়নি যে তাঁরা পুলিস অফিসারদের আত্মীয়। নজর ঘোরাতে অত্যন্ত কৌশলীভাবে এগিয়েছেন তাঁরা। এক কোটির নীচের পুরস্কার জেতা ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা পুলিশ কর্তা বা অফিসারদের আত্মীয়, তার চুরচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। নির্দিষ্ট ওই লটারি সংস্থা থেকে পাঁচ বছরে কারা এক কোটির নীচে মোটা অঙ্কের পুরস্কার পেয়েছেন কারা কারা এখন তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকেরা। মনে করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই এই সব আধিকারিক ও তাঁদের ঘনিষ্ঠজনদের ডেকে পাঠাবে ইডি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct