করমজলের দস্যু বানর
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা সবাই কেমন আছ? তোমাদের সবাইকে হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাসের শুভেচ্ছা। আজ তোমাদের সবাইকে একটি গল্প বলবো। সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বে। আশাকরি তোমরা গল্পটি পাঠের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারবে। এইতো সেদিন শিক্ষা সফরে সুন্দরবন গিয়েছিলাম। সাথে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরাও ছিল। প্রথমবারের মতো সুন্দরবন যাওয়ার আনন্দ যেন আর ধরছিলো না। বন্ধুরা, তোমরা কি সুন্দরবনের নাম শুনেছ? সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলের একটি প্রশস্ত বনভূমি; যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত। এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী লোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে আছে ৬২ এবং বাকি ৩৮% রয়েছে ভারতে। এই বনের প্রাতিষ্ঠানিক নাম সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট। বন্ধুরা, তোমরা জান সুন্দরবন মানেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ভয়ে আমাদের গা চমচম করছিল। আমাদের সাথে বন বিভাগের দু’জন গানম্যান ছিলো। তাদের নেতৃত্বে আমরা দলবেঁধে সুন্দরবনের অনেকগুলো বিখ্যাত স্পটে ঘুরেছি। এই যেমনঃ ডিমের চর, দুবলার চর, মান্দারবাড়িয়া, জামতলা সৈকত, করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালি, হীরন পয়েন্ট ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে মজার ঘটনাটি ঘটেছে ফেরার পথে। সেদিন সকালে আমরা সবাই করমজল দেখতে যাই। এখানে একটি কৃত্রিম কুমির প্রজনন কেন্দ্র অবস্থিত। জায়গাটি অনেক সুন্দর। প্রচুর বানর এবং হরিণ আছে।
করমজলে কেনাকাটার জন্য কিছু অস্থায়ী দোকান আছে। ফেরার পথে সেসব দোকান থেকে আমি ইচ্ছেমতো চকলেট, আচার এবং সুন্দরবনের মধু কিনে জাহাজের দিকে ফিরছিলাম। সাথে কয়েকজন ছাত্রও ছিলো। কিছুদূর আসতেই হঠাৎ অনেকগুলো বানর আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতের ব্যাগটি ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। আমাদের অদুরেই মজা করে খেতে লাগলো। আর আমরা অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। আমার একজন ছাত্র ওদের দিকে তেড়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি ওকে যেতে দিলাম না। কারণ আমি জানি, ওরা খুব একতাবদ্ধ। ওদেরকে সামান্যতম আঘাত করলে আর রক্ষা নেই। হাজার হাজার বানর এসে একসাথে আক্রমণ করবে। বন্ধুরা, তোমরা যখন সুন্দরবন ঘুরতে যাবে তখন কিন্তু আমার মতো অসতর্ক থাকবে না। সবসময় চোখ, কান, খোলা রাখবে। কেননা যে কোনো সময় তুমি বিপদে পড়তে পার। আর একটি কথা, ভুলেও কিন্তু একা একা কোথাও যাবে না। দলছুট হবে না। আর মনে রেখো, বনের ভেতরে হাঁটার সময় গাছের পাতা ছেঁড়া এবং কথাবলা নিষিদ্ধ। কোনো প্রয়োজন হলে ইশারায় জানাতে হবে। আজ এ পর্যন্তই বন্ধুরা। সবাই ভালো থেকো। তোমাদের সুন্দরবন ভ্রমণের অপেক্ষায় রইলাম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct