স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তাদের প্রতিপক্ষ পশ্চিমারা পারমাণবিক হুমকি কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সফল সংলাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের উদাহরণগুলো থেকে এ ধারণা নেওয়া যেতে পারে যে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে নিছক ‘আলোচনা’ নয়, বরং একটি বড় ধরনের ‘সংলাপ’ হতে পারে, যা উভয় পক্ষের আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বরকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। অনেকে মনে করছেন, আলোচনার সম্ভাব্য খারাপ দিকগুলো অনেকটাই স্পষ্ট। বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখেছেন রন লেভি।
মার্কিন কংগ্রেসের উদারপন্থী সদস্যরা সম্প্রতি পশ্চিম এবং ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনা আবার শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই নিরিখে অনেকেই এ ধরনের আলোচনা কেমন হতে পারে এবং তা থেকে কার কী লাভ এবং কার কী লোকসান হতে পারে, তা খতিয়ে দেখছেন। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে মারাত্মক সামরিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে, ঠিক তখন এ যুদ্ধকে ঘিরে মহা বিপর্যয়করভাবে বাগ্যুদ্ধ বেড়ে চলেছে। ইউক্রেনের খুব কম লোকই শান্তি আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ‘ইউক্রেনের ইচ্ছাকে’ সম্মান করবেন।এখন প্রশ্ন হল, শীর্ষ রাশিয়ান এবং পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করতে পারবে কি?
স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তাদের প্রতিপক্ষ পশ্চিমারা পারমাণবিক হুমকি কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সফল সংলাপ করতে সক্ষম হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের উদাহরণগুলো থেকে এ ধারণা নেওয়া যেতে পারে যে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে নিছক ‘আলোচনা’ নয়, বরং একটি বড় ধরনের ‘সংলাপ’ হতে পারে, যা উভয় পক্ষের আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বরকে কমাতে সাহায্য করতে পারে।এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি আসছে। অনেকে মনে করছেন, আলোচনার সম্ভাব্য খারাপ দিকগুলো অনেকটাই স্পষ্ট। তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন, এখন শান্তি আলোচনায় বসা মানে পুতিনকে তাঁর পারমাণবিক শক্তির জন্য পুরস্কৃত করা। অর্থাৎ এটি পারমাণবিক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পুতিনের উদ্দেশ্য হাসিলে সহযোগিতা করার নামান্তর হবে।প্রকৃতপক্ষে, আলোচনার পাশাপাশি রাশিয়ার আক্রমণের কড়া প্রতিক্রিয়াও থাকতে হবে। আরেক গোষ্ঠী মনে করে, পুতিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল ইউক্রেনকে রাশিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সেই লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হলে যেকোনো আলোচনা অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হবে। আরেক দল মনে করে, আক্রমণকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসাটা নৈতিকভাবে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হবে। এটি কোনো নতুন বিতর্ক নয়। পশ্চিমা নেতারা প্রায়ই শত্রুদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না, তা নিয়ে দোটানায় থাকেন। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামা ও জন ম্যাককেইনের নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁরা প্রেসিডেন্ট হলে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না, তা নিয়ে নিজেদের মত প্রচার করেছিলেন।
আজকের এই সময়েও সেই বিষয়টি সামনে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন থেকে শুরু করে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন পর্যন্ত—প্রায় সব পশ্চিমা নেতা ম্যাককেইনের কঠোর পন্থাকে অনুসরণ করছেন। তাঁরা রাশিয়াকে মোকাবিলা না করে শুধু আলোচনা বৈঠকে বসতে চাইছেন না। যাঁরা শান্তি আলোচনার পক্ষে, তাঁরা জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, প্রথম আক্রমণ করা রাশিয়ার ভুল স্বীকারের জন্য অপেক্ষায় থেকে যুদ্ধের সমাপ্তি দেখার আশা বাস্তবসম্মত কি না। আরেকটি বিকল্প হলো, চলমান যুদ্ধকে একটি পরিপক্ব অবস্থায় নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাশিয়া অনেক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পরও তাঁর এ যুদ্ধকে বহুদূর টেনে নেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। ফলে আলোচনায় না বসলে এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে তাতে সন্দেহ নেই।প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে না চাওয়ার পক্ষে মত দেওয়া বিশ্লেষকদের যুক্তি যথেষ্ট বোধগম্য। তাঁদের যুক্তি হলো, যখন কেউ একটি জঘন্য ও অন্যায্য যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তাকে অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু আমরা যদি আলোচনায় বসতে না চাই এবং যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে কি তার পরিণতি হিসেবে আরও অনেক মৃত্যু দেখতে হবে না? শিগগিরই হোক বা পরে হোক, শীর্ষ বৈঠক হতে পারে। সম্ভবত একমাত্র প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, বৈঠকটি কখন হবে? পশ্চিমের নেতারা, যারা রাশিয়ার আগ্রাসনে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁরা বৈঠকটির জন্য প্রস্তুত না–ও হতে পারেন। কংগ্রেসের উদারপন্থীরা মনে করছেন, আলোচনার ধারণাটি জলাঞ্জলি দিলে তা রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct