নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতা হাইকোর্টে এদিন খড়গপুর আইআইটি-তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর মামলার শুনানি চলে । বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল কলকাতা হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে আদালতে। সেই সঙ্গে খড়্গপুর সদর থানাকে কেস ডায়েরিও জমা দিতে বলেছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চ। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার কে এই মামলায় বিশেষ পুলিশ অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে আসামের এক পরিবার তাদের নিহত ছেলের রহস্য মৃত্যুতে সিআইডি তদন্ত চেয়ে মামলা দাখিল করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আইআইটি-খড়গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়জান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্তে ভরসা নেই তার পরিবারের। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ফয়জানের বাবা-মা। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তারা এই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।নিহত পরিবারের দাবি, -' গত কয়েক মাসে ফয়জান যাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে তার কলরেকর্ড খতিয়ে দেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি খড়গপুর থানার পুলিশ। শুধুমাত্র হোস্টেলের নিরাপত্তা রক্ষী এবং তার কয়েকজন বন্ধুকেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে'। আইআইটি কর্তৃপক্ষ অবসাদের কারণে ফয়জান আত্মহত্যা করেছে বলে যে দাবি করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তার বাবা সেলিম আহমেদ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, -' আইআইটিতে ফয়জান ভালোই ফল করেছিল। তারপরে কী কারণে তার অবসাদ সে বিষয়টি কোনওভাবেই স্পষ্ট হচ্ছে না'।
তাছাড়া কেন ময়নাতদন্তে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফয়জানের পরিবার। পরিবারের দাবি , -' খড়গপুর টাউন থানায় তারা ইমেল করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন কিন্তু এখনও পাননি। আমরা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট নয়। সেই কারণে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।' আইআইটি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আসামের গুয়াহাটির বাসিন্দা ওই দম্পতির দাবি, -' ছেলের মৃত্যুর খবর সঠিক সময়ে জানানো হয়নি তাঁদের'।আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ১৪ অক্টোবর খড়গপুর হস্টেলের ঘরে ফয়জানের দেহ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে বলা হয় তিনি মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছে। ওই ছাত্রের বাবা মায়ের দাবি -' অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় যে ভাবে তদন্ত করা দরকার, ফয়জানের ক্ষেত্রে সেই তদন্ত হয়নি'। এদিন এজলাসে বিচারপতির নির্দেশ দেন, -' আগামী বৃহস্পতিবার এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার এবং পুলিশ সুপার কর্তৃক নিযুক্ত উচ্চ পদস্থ আধিকারিককে আদালতে উপস্থিত থাকবেন। ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত কতটা এগোল?তার রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে'।আদালতের আরও নির্দেশ, -' এই মামলায় অবিলম্বে ভিসেরা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত ছাত্রের সঙ্গে শেষ যে ব্যক্তির ফোনে কথা হয়েছিল, তাঁকে খুঁজে বার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে । তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকলের সাক্ষ্য এবং গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করতে হবে'। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন অনুযায়ী, খড়গপুর আইআইটি-তে র্যাগিং ঠেকানোর পরিকাঠামো রয়েছে কি না?তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।আদালতের নির্দেশ,- ' হস্টেলে যথাযথ সিসিটিভি রয়েছে কি না? তাও পুলিশকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশের তদন্তে সব রকম সাহায্য করবে খড়্গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ বলে আদালত জানিয়েছে আদেশনামায়।বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। সেখানে বিচারপতি সংশ্লিষ্ট জেলা অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপির রিপোর্ট তলব করেছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। এর পাশাপাশি সদর খখড়গপুর থানা কে কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে। সেইসাথে পুলিশ সুপার নিযুক্ত একজন বিশেষ তদন্তকারী পুলিশ অফিসার থাকবেন এই মামলার তদন্তে।আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct