খাদ্য অপচয় রোধ করতে হলে সবার মধ্যে খাদ্যঅপচয় সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং একই সঙ্গে তৈরি করতে হবে খাদ্যের শৃঙ্খল বিধান এবং তা মানার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা। সরকারি ও বেসরকারি নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের পর থেকে খাবার পরিবেশন পর্যন্ত যথাযথ নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অপচয় যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে খাদ্যের সরবরাহ বাড়বে। এর ফলে উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খেতে হবে না। এবং এতে করে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ কমবে। বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর খাদ্যের অপচয়ের যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাকে অবশ্যই বিপরীতমুখী করতে হবে। এ নিয়ে লিখেছেন জ্যাষ্টিন গোমেজ।
অন্ন দে মা, অন্ন দে’ বলে আকুল কান্নায় কেঁদেছিলেন রামপ্রসাদ। বিদ্রোহী কবি লিখেছিলেন, ‘দারিদ্র্য অসহ/ পুত্র হয়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ/ আমার দুয়ার ধরি!’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যে পাওয়া যায় ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,/ পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ লাইনগুলো সাহিত্যের হলেও নির্মম বাস্তবতা। অবাক করা বিষয় হলো, আজও পৃথিবীতে ৪০ ভাগ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে কেবল খাদ্যের অভাব-অনটনে আর ক্ষুধা-তৃষ্ণার পাহাড়সম সমস্যার কারণে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য একবেলাও পর্যাপ্ত খাবার জোটে না তাদের পাতে। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘সবজিটা সুস্বাদু নয়’ বলে ফেলা দেওয়া হচ্ছে। রান্না ভালো হয়নি, তাই ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে শুরু হয় ‘খাদ্যঅপচয়’। আবার অনেকের কাছে খাদ্যঅপচয়টা স্মার্টনেসে পরিণত হয়েছে। এই স্মার্টনেসের বড় প্রমাণ পাওয়া যায় শহরের রাস্তার ধারে ডাস্টবিনগুলো দেখলে। খাদ্যের অপচয়ে ডাস্টবিন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাগাড় এলাকা সয়লাব থাকতে দেখা যায়। সমাজের একশ্রেণির মানুষ উদ্ভট আনন্দ পায় এই অপচয়ে শামিল হয়ে। এতে করে তারা তাদের অর্থের জোগান যেমনি নষ্ট করছে, তেমনি পরোক্ষভাবে অন্যকেও খাদ্য থেকে বঞ্চিত করছে। সামান্য একটু খেয়ে বাকিটুকু ফেলে দিয়ে যাকে স্মার্টনেস মনে হচ্ছে আজকে, আগামীকাল সেটাই পৃথিবীকে ক্ষুধার সাগরে ডুবিয়ে দেবে—এ কথা শত ভাগ নিশ্চিত। তখন দেখা যাবে টাকা আছে, কিন্তু খাদ্য নেই। মনে রাখতে হবে, খাদ্যসংকট দেখা দিলে অঢেল সম্পদের মালিকদেরও না খেয়ে মরতে হবে। এমনও হতে পারে, একটি সময় চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির ফলে মানুষ আর অসুখ-বিসুখে মরবে না, মরবে খাদ্যের অভাবে। তাই যতটুকু খাবার প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত নিয়ে অপচয় করার কোনো মানেই হয় না। আমাদের সবাইকে খাদ্যের অপচয় রোধে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, পর্যটন, রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন, সুপার মার্কেটসহ সব জায়গাতেই, বিশেষত যেখানে খাদ্য তৈরি-বিক্রি অথবা খাওয়া হয়, এসব স্থানে খাদ্যঅপচয় বন্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। যাদের প্রচুর প্রাচুর্য রয়েছে, তাদের কাছ থেকে আরো সচেতনতা প্রত্যাশিত। মোটকথা, আমাদের সবারই খাদের অপচয় বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।
খাদ্য অপচয় রোধ করতে হলে সবার মধ্যে খাদ্যঅপচয় সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং একই সঙ্গে তৈরি করতে হবে খাদ্যের শৃঙ্খল বিধান এবং তা মানার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা। সরকারি ও বেসরকারি নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের পর থেকে খাবার পরিবেশন পর্যন্ত যথাযথ নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য অপচয় যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে খাদ্যের সরবরাহ বাড়বে। এর ফলে উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খেতে হবে না। এবং এতে করে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ কমবে। বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর খাদ্যের অপচয়ের যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাকে অবশ্যই বিপরীতমুখী করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রয়াস। অতিরিক্ত খাবার নিয়ে অর্ধেক ডাস্টবিনে না ফেলে বরং না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আজ সময়ের দাবি। এই শহরের বহু মানুষ এখনো খাবার না পেয়ে আবর্জনার স্তূপ থেকে মাংসের হাড্ডি চুষে খায়। তাই খাবার অপচয়ে অতিরিক্ত অর্থব্যয় না করে বরং তাদের খাবার জোগানে কিছু অর্থব্যয় করা প্রয়োজন। কোনোক্রমেই ভুলে গেলে চলবে না যে, বিশ্বমন্দা অত্যাসন্ন!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct