আপনজন ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্বেও কেন বেতন চালু ও চাকরিতে পুনরায় যোগদান করা হচ্ছেনা, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চের দারস্থ হয়েছেন এই শিক্ষকরা।গত ১৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ টেট এর আপিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বেশিরভাগ নির্দেশে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে। যার মধ্যে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের বেতন চালু ও পুনরায় চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ রয়েছে। পাশাপাশি আত্মপক্ষ সমর্থনে সূযোগ দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেইমতন গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে টেটের বরখাস্ত হওয়া মামলায় ২৬৯ জন শিক্ষক পক্ষভুক্ত হওয়ার যাবতীয় নথি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েছে।পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ চাকরি বাতিল হওয়া ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক। পুনরায় চাকরিতে যোগদান করতে দিক রাজ্য। এই আর্জি জানিয়ে আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । পাশাপাশি অবিলম্বে বেতন চালু করার আবেদন রয়েছে ২৬৯ জনের। দ্রুত শুনানি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বুধবার ।গত মঙ্গলবার ২৬৯ জনকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলায় পক্ষভুক্ত করার জন্য তথ্য চেয়ে পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবীরা। তারপর এদিন সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ২৬৯ জন চাকরিতে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক।উল্লেখ্য , প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ২৬৯ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। 'সুপ্রিম' নির্দেশের পরই মামলায় তাদের যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় মামলাকারীদের আইনজীবীরা। প্রসঙ্গত , গত ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় মেধাতালিকা। ২০১৭ সালে অতিরিক্ত একটি মেধাতালিকাও প্রকাশিত হয়।প্রসঙ্গত , দ্বিতীয় তালিকাতে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় বেশ কয়েক টি ।
সেই মামলার প্রেক্ষিতে ২৬৯ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ,পরবর্তীতে ডিভিশন বেঞ্চেও নির্দেশ বহাল ছিল। এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ -' টেটে ২৬৯ জন চাকরিপ্রাপককে অতিরিক্ত এক নম্বরের কারণ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ স্পষ্ট করতে পারেনি। এই বিষয়ে কোনও নথিও সেভাবে দেওয়া হয়নি'। এরপরেই ২৬৯ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সিবিআই তদন্তে কোনও বাধা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট । যদিও সিবিআইকে বলা হয়েছে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রাথমিকে চাকরি বাতিল হওয়া ২৬৯ জনকে মামলায় সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।জানা গেছে, আদালতের নির্দেশ মেনে গত মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবীরা। এই ২৬৯ জনের নাম, ঠিকানা, কোন স্কুলে কর্মরত ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে চিঠিতে।প্রাথমিকে টেট কেলেঙ্কারিতে এই ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও বহাল রাখে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ। তবে কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশের উপর সম্প্রতি স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২৬৯ জনকেই মামলায় পার্টি করে তাঁদের বক্তব্য শোনার জন্য কলকাতা হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে মামলায় সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া।প্রাথমিকে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিলের কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, - 'কারও চাকরি বাতিল করা যাবে না। চাকরি থেকে কাউকে বরখাস্ত নয়। ২৬৯ জনেরই চাকরি বহাল রাখতে হবে। নির্দেশ জারির ৪ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে। সুযোগ না দিয়েই একতরফাভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' উল্লেখ্য , প্রাথমিকে ২৬৯ জনের চাকরি বেআইনি। এই মর্মে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। পাশাপাশি তাঁদের সকলের বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। যে নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল পিটিশন দাখিল হয় ডিভিশন বেঞ্চে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়-ই বহাল রাখে। কারণ, ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, -' সিঙ্গল বেঞ্চের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কেন বেছে বেছে ২৬৯ জনকে বাড়তি ১ নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়'।
ওএমআর শিট সহ একাধিক নথি সিঙ্গল বেঞ্চের সামনে পেশ করেনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। মাস খানেক পূর্বে এই মামলায় ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ওই শিক্ষকরা ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। ওই ২৬৯ জনকে অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন ভুল থাকা সত্ত্বেও কেন বাকিদের ওই অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হল না? ১ নম্বর দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত পর্ষদের তরফে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে দেখা গিয়েছিল মানিক ভট্টাচার্য ছাড়া আর কারও সই নেই! পর্ষদের দেওয়া এই নথি দেখে তাজ্জব হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরই তলব করা হয়েছিল মানিক ভট্টাচার্যকে। আর সেই নথিই এবার দেওয়া হয়েছে সিবিআই-কে। প্যানেল ভুয়ো ছিল কি না?এক্সপার্ট কমিটির মত কী ছিল? এই সব তথ্যই রয়েছে ওই নথিতে।টেট পরীক্ষায় প্রাপ্ত বাড়তি ১ নম্বর নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। এবার সেই ১ নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন ছিল কি না? তা জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পর্ষদের তরফে কলকাতা জানানো হয়েছিল, -'সবাইকে ১ নম্বর বাড়তি দিলে লাভ হত না। যাঁদের ১ নম্বর কম ছিল, অর্থাত্ যাঁরা ১ নম্বরের জন্য উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তাঁদের নম্বর দেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত ছিল। শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের বাড়তি ১ নম্বর দেওয়া হয়েছে'। তবে সব পরীক্ষার্থীদের কে কেন ১ নাম্বার বৃদ্ধি ঘটানো হলো না, তার সদুত্তর পাইনি কলকাতা হাইকোর্ট।এরপর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ চাকরি বাতিল ঘোষণা করে ২৬৯ জন শিক্ষকের।এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। সেখানে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল থাকে।এরপর সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এর বেশিরভাগ নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে। যার মধ্যে ২৬৯ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল ঘোষণাটি।ওই শিক্ষকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সূযোগ দেওয়া হয় নির্দেশ জারির ৪ সপ্তাহের মধ্যে।গত মঙ্গলবার শিক্ষকদের আইনজীবীরা বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চে অর্থাৎ বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চে বেতন চালু ও পুনরায় চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে দারস্থ হলেন ২৬৯ জন শিক্ষক। খুব তাড়াতাড়ি এই মামলার শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct