মনমোহনের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় দিল্লির সরকারি বলয়ে এ কথা কারও কাছে অবিদিত ছিল না যে তিনি তাঁর বসের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বা নীতি ঠিক করতে পারতেন না। বহু সাংবাদিিই বিশ্বাস করে থাকেন পি ভি নরসিমা রাওয়ের অধীনে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন সিং যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছিলেন, তা ভারতকে বদলে দিয়েছে। নতুন কংগ্রেস সভাপতি মনমোহন সিংয়ের পথ অনুরসরণ করে কি নতুন কোনও পথ দেখাবেন? এ নিয়ে লিখেছেন তাভলিন সিং। আজ শেষ কিস্তি।
তবে সোনিয়া গান্ধীর বিষয়ে আমার অনুভূতি তেমনটা নয়। কারণ, আমি সেই রাজনৈতিক নেতাদের অপছন্দ করি, যাঁরা জবাবদিহি ছাড়াই বিপুল ক্ষমতার মালিক হয়ে বসে থাকেন। আমি বিশ্বাস করি, ২০০৪ সালে কংগ্রেস পার্টির জয়ের পর তিনি তাঁর একান্ত নিজস্ব বলয়ের মন্ত্রণাদাতাদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে রাজি না হয়ে একটি অস্বাস্থ্যকর নজির স্থাপন করেছিলেন। ‘শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে নরেন্দ্র মোদির প্রশংসিত হওয়ার একটি বড় কারণ হলো ভারতীয়রা তাঁকে নিয়ে এই ভেবে গর্ব করতে পারে যে মোদি ভারতের জনগণের কাছে জবাবদিহি করেন; ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতির কাছে নয়। যাঁরা বলেন, তিনি আরএসএস প্রধানের কাছে জবাবদিহি করেন, তাঁরা ভুল বলেন। কারণ, তিনি দু–দুবার দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি এতটাই জনপ্রিয় নেতা যে তাঁকে নির্বাচনে জেতার জন্য আরএসএসের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়নি। তিনি উচ্চ পদে এমন লোকদের নিয়োগ করেন, যাঁরা আরএসএস ধারণায় নিয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন, তার কারণ তিনিও একই ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের’ ছাত্র। কংগ্রেস পার্টিও আলাদা কিছু নয়। তারাও যে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেছিল, তাঁরাও নেহরুপন্থী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী।
আমার অভিজ্ঞতায় বলে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাঁরা দুই মেয়াদের বেশি জয়ী হন, তাঁরা স্বৈরশাসকের মতো আচরণ করতে শুরু করেন। তাই আমি চাই কংগ্রেস পার্টি দরবারিদের ক্লাব না হয়ে আবার একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল হয়ে উঠুক। আমি বিশ্বাস করি না, যে দলটি আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, সেই দলটি নির্বাচিত সভাপতির দ্বারা পরিচালিত না হয়ে একটি পরিবারকেন্দ্রিক ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’তে পরিণত হবে। মল্লিকার্জুন খাড়গেকে গান্ধী পরিবারের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়েছিল বলেই তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন—এমনটা না ভাবার কোনো কারণ নেই। দলের সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রথম বক্তৃতায়, তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, সোনিয়া গান্ধী তাঁর ‘পথনির্দেশক আলো’ হয়ে থাকবেন। গত সপ্তাহে কংগ্রেস পার্টির কয়েকজন নেতা ও অন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে আমার বিবাদ থেকে যে আরেকটি বিষয় উদ্ঘাটিত হয়েছে, তা হলো গত আট বছরে দুটি সাধারণ নির্বাচন এবং অন্য নির্বাচনের প্রায় প্রতিটিতে হেরেও কংগ্রেস নেতাদের অহংকার কমেনি। তাঁরা অবিরতভাবে বিশ্বাস করে যাচ্ছেন, ভারত শাসন করা নেহরু পরিবারের জন্মগত অধিকার এবং মোদি হচ্ছেন একজন দখলদার লোক, যাকে অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct