ধনতেরাস
শংকর সাহা
গ্যারেজে যাবার আগে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে নিখিল বলে ওঠে শুনছ, বলছি আজ বলে ধনতেরাস। অপূর্ব বলছিলো আজ সোনা -রুপো কিনলে নাকি লক্ষ্মীদেবী প্রসন্ন হন” সেলাইয়ের মেশিন চালাতে চালাতে পাশের ঘর থেকে বিনোদিনী হেসে বলে, “ ও আমাদের অভাবের সংসারে হবেনা। যাদের দিনের শেষে চিন্তা করতে হয় কাল কি খাবো?” ওঠোনে রাখা সাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েও আবারো ফিরে আসে নিখিল। বিনোদিনীকে ডেকে বলে,” সেবারে আমার শরীরটা খারাপ হলো। সেই যে তোমার কানের দুটো নষ্ট করে চিকিৎসা করালাম তারপরে আর গড়িয়েই দিতে পারলাম না। পুজোর বোনাসটাও এবারে পেলাম না ।“ বিনোদিনী শাঁড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলে,” আমার কিছুই লাগবে না।তুমিই আমার অলংকার” সেদিন ছিল শনিবার। আবার ভূতচর্তুদশীও । বিনোদিনী নিখিলের জন্যে চোদ্দ শাঁক রেঁধেছে। শনিবার তাই দুপুর দুটোর মধ্যেই গ্যারেজ বন্ধ হয়ে গেলে গেছে। অপরাহ্নের বেলা না পড়তেই নিখিল বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি আসতেই বিনোদিনী বিনোদিনী বলে চিৎকার করতে করতে ঘরে আসে নিখিল। বিনোদিনী তখন পুজো দিয়ে সবে বসে অর্ডারি জামায় বোতাম গুলো লাগাচ্ছিলো। নিখিলের গলা পেয়ে ওঠে আসে সে। আজ যেন নিখিলের চোখে মুখে বেশ হাসি। বিনোদিনীকে জড়িয়ে ধরে বলে,” চোখটি বন্ধ করো”
বলেই পকেট থেকে দুটো সোনার কানের দুল বের করে বিনোদিনীকে পড়িয়ে দেয় নিখিল। চোখ খুলেই বিনোদিনী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। “কেন এনেছো এগুলো। কোথায় পেলে টাকা?” তোমার সামনের সপ্তাহে কত ঔষধ কেনার আছে। এগুলো আমাদের অভাবের সংসারে মানায় না নিখিল। নিখিল হেসে বলে,” ও আমি ও তো বুঝিনে। ওই যে বললাম আজ ধনতেরাসে গহনা কিনলে লক্ষ্মীদেবী প্রসন্না হন..” বিনোদিনী লক্ষ্য করে নিখিলের চোখের কোণে জল। আবেগে নিখিলকে বুকে আবারো জড়িয়ে ধরে বিনোদিনী। নিখিলও বুঝতে পারে বিনোদিনীর কষ্টগুলো। আড়ালে চোখের জলটি মুছে নিখিল বলে, “ চলো চলো বড্ড খিদে পেয়েছে। আমার জন্যে চোদ্দ শাঁক রেঁধেছো তো বিনো...!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct