শিকার
তাপস কুমার বর
নিখিলেশ এখনো নিজেকে শান্তনা দিতে পারে না,সে বার বার ছুটে যায় বসুন্ধরার কাছে। নিখিলেশ চিৎকার করে বলতে চায়,..... “ওরা আমার বসুন্ধরা কে চোখের সামনে মেরে ফেললো,যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে।অভাগার মতো আমি জেল বন্দি বিধাতা,এর বিচার তুমি একদিন করবে!” - স্বার্থপর সমাজ ব্যবস্থা নারী মাংস লোভীতে নিজেকে পাগল করে তোলে,যেখানে সমাজ ব্যবস্থা কতটা সুস্থ সেটা মানুষ এখনো বোঝে না। নিখিলেশ বসুন্ধরাকে ভীষণ ভালোবাসতো। বসুন্ধরা ছোটবেলা থেকে মামাদের বাড়িতে মানুষ। যখন বসুন্ধরার বয়স প্রায় ১০ বছর, তখন তাঁর মা ও বাবা দুইজনে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়। তখন থেকে বসুন্ধরা মামা বাড়িতে চাকরানীর মতো মানুষ হয়েছে। মামা ও মামিরা বলে,..... “কে আর এতোদিন টানবে? আমাদের ছেলে মেয়েদের সামলাতে পারছি না। আবার একটা আপদ এসে জুটেছে!” - দাদু ও দিদা দুজনে বসুন্ধরাকে খুব ভালোবাসে। যতদিন তারা বেঁচে ছিল ততদিন তারা স্নেহের চাদরে লুকিয়ে রাখতো বসুন্ধরা কে। মানুষ তো “মরনশীল” তারা তো চিরকাল বেঁচে থাকে না!একদিন হঠাৎ বসুন্ধরার দাদু হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার এক সপ্তাহ পর বসুন্ধরার দিদা শোক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি ও মারা যান। সেদিন বসুন্ধরা খুব কান্নাকাটি করেছিল। যে মানুষ গুলো এতোদিন তাকে আগলে রেখেছিল “ভালোবাসার চাদরে”আজ তারা আর নেই।....... “বসুন্ধরার কপালে একটা মহাকালের ছাপ পড়েছে!হয়তো, এবার তাঁর মামা বাড়িতে ঠাঁই হবে, অকথ্য অত্যাচারে!” - একদিন নিখিলেশ কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরছিল। রাস্তায় যেতে যেতে দেখতে পেলো একটা সুন্দরী মেয়ে, হাতে একটা বাজারের ব্যাগ আর একটা হাতে পেতলের কলসী নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। নিখিলেশ দেখলো ব্যাগটা নিয়ে চলতে মেয়েটির অনেক কষ্ট হচ্ছে। তখন নিখিলেশ কাছে গিয়ে বললো, ব্যাগটা আমাকে দিন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে! মেয়েটি বললো না না আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমি নিজেই নিয়ে যেতে পারবো। নিখিলেশ অনেক আকুতি-মিনতির পর ব্যাগটা হাতে দিল। রাস্তায় চলার পথে,তাদের দুজনের পরিচয় হয়। নিখিলেশ কলেজে ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। পড়াশোনা নিয়ে তার অনেক দূর এগোনোর ইচ্ছা। বসুন্ধরাকে পড়াশোনার কথা জিজ্ঞাসা করলে, সে লজ্জা মাথা নিচু করে। সে আজকের হয়তো,পড়াশোনা করলে কলেজে পড়তো। বসুন্ধরা তার জীবনের কথা নিখিলেশকে বললো,এই কথাগুলো শুনে নিখিলেশের মায়া হলো বসুন্ধরার উপর। প্রথম সাক্ষাতে,...... “নিখিলেশ কথা বলতে বলতে চুপ হয়ে যায়,বসুন্ধরার কথা শুনে। অনেক মায়া পড়ে গেছে, দুজন-দুজনের চোখের দৃষ্টিতে।তারা লজ্জায় বার বার মাথা নিচু করছে”! - কিছুটা দূরে গিয়ে বসুন্ধরা বললো ওইটা আমার মামা বাড়ি,মামা দেখতে পেলে আপনার বিপদ হবে। এখানে আমাকে ব্যাগটা দিয়ে দিন,তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। নিখিলেশ ব্যাগটা দিয়ে বসুন্ধরাকে বললো, আবার দেখা হবে আমাদের! এই কথা শুনে”লজ্জায় বসুন্ধরা আর কিছু বললো না”!
এ দিকে বাজার আনতে এতোটা দেরি হওয়ার জন্য মামির কাছ থেকে অনেক বকুনি শুনতে হলো বসুন্ধরাকে। বসুন্ধরা এখন আর ছোট্ট মেয়ে নয়, সে এখন যৌবনা সুন্দরী। তাকে রাজকন্যার মতো দেখতে হয়েছে। ওই পাড়ার বীরেন্দ্র চাটুজ্যের যশ ও প্রতিপত্তিতে নামদার মানুষ। কিন্তু চরিত্র লোভী ও স্বার্থপর। একদিন হঠাৎ বসুন্ধরাকে দেখে বীরেন্দ্র চাটুজ্যের ভালোলেগে যায়। চাকর গগণকে বললো “ওই মেয়েটা কে রে? গগণ বললো,আজ্ঞে মালিক ও তো সুরেশের ভাগ্নি “বসুন্ধরা!” বীরেন্দ্র চাটুজ্যে বললো ও তাই না কি? তাহলে সুরেশের সঙ্গে একবার কথা বলতে হয়,কি বলিস গগণ!চাকর গগণ বললো “বাবু আমার সংসার করতে চায়! বয়সটা তো শেষ কালে এসে ঠেকেছে।” এই কথা শুনে গগণকে একটা ধমক দিলো বীরেন্দ্র চাটুজ্যে! নিখিলেশ ও বসুন্ধরা দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসে। এই কথা বসুন্ধরার মামা সুরেশ জানতে পেরে তাড়াতাড়ি বীরেন্দ্র চাটুজ্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে টাকার লালসার নিজের ভাগ্নিকে ওই লোভী ও স্বার্থপর রক্তপিপাসুর কাছে বেচে দিতে এক পা পিছু হননি। একদিন হঠাৎ বসুন্ধরাকে ভুল বুঝিয়ে বীরেন্দ্র চাটুজ্যের বাড়িতে কাজের জন্য রেখে দিয়ে আসে। বসুন্ধরা মোটেও থাকতে চায়নি। জোর করে তার মামা রেখে দিয়ে আসে! সেদিন রাতে বসুন্ধরা নিজেকে ভীষণ একা করে ফেলেছিল। মনে হয়,.......
“একটা জংলী শিকারীর সামনে উপস্থিত। বার বার তার চোখের দৃষ্টি কামনার লোভে ছোঁ মারতে চাইছে!” - সেদিন বসুন্ধরা বুঝে গেছে তার মামা কতটা স্বার্থপর,শুধু টাকার জন্য তার নিজের ভাগ্নিকে বিক্রি করতে তার বিবেকটাও কাঁদলো না। এই রকম একটা নোংরা মানুষের কাছে শুধু টাকার জন্য বিক্রি করে দিয়েছে,হায়রে বিধাতা! বীরেন্দ্র চাটুজ্যে খুব ক্ষমতা শালী। এই বন্দি কারাগার থেকে সে কিভাবে বেরোবে? এইভাবে প্রতিদিন অত্যাচারীত হতে হতে, সে একদিন মরে যাবে! একদিন হঠাৎ নিখিলেশের সঙ্গে বসুন্ধরার দেখা হয়। বসুন্ধরাকে দেখে নিখিলেশ জিজ্ঞাসা করে,..... “কি হয়েছে বসুন্ধরা?আমাকে বলো!” - বসুন্ধরা সবকিছু বলেছিল নিখিলেশ কে!তখন নিখিলেশের শরীরে “রক্ত গুলো দাবানলের মতো জ্বলছিল” ওই রক্ত পিপাসুকে সে হত্যা করতে চায়। এই রকম নরখাদকের কোন বাঁচার অধিকার নেই। সেদিন বসুন্ধরা নিখিলেশকে বুঝিয়ে শান্ত করেছিল কারন বীরেন্দ্র চাটুজ্যে অনেক ক্ষমতাশালী। এখান থেকে তাদের পালানোর কোন পথ নেই। কাঁদতে কাঁদতে বসুন্ধরা চলে গিয়েছিল,...... “নিখিলেশ সেদিন নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনি”! - সেদিন রাতে বীরেন্দ্র চাটুজ্যে সব জানতে পারে। নিখিলেশের সঙ্গে বসুন্ধরা দেখা করে সবকিছু বলে দিয়েছে।এই কথাগুলো আর পাঁচ কান হলে চরম বিপদ। যাতে এই কথাগুলো আর পাঁচ কান না হয়,তার জন্য বসুন্ধরাকে যন্ত্রণার আগুনে ধুঁকড়ে ধুঁকড়ে সেদিন গলাটিপে হত্যা করেছিল ওই নরখাদক।বীরেন্দ্র চাটুজ্যে সবকিছু ঘামাচাপা দিয়ে নিখিলেশের উপর সব দায় চাপিয়ে নিজেকে সাধু পুরুষ প্রমাণ করতে চেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেদিন রাতে নিখিলেশ নরখাদক মাংসলোভী বীরেন্দ্র চাটুজ্যেকে হত্যা করে বাড়িতে ঢুকে। বসুন্ধরার মৃত্যুদেহের সামনে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। পরদিন নিখিলেশ কে জেলে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। জেল বন্দি নিখিলেশ চিৎকার করে বলতে চায়,...... “সমাজ তুমি আজ লোভী! আমার বসুন্ধরাকে কেড়ে নিয়েছো! তোমাদের অসচেতনতার অভাবে। একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে রক্তপিপাসুর মতো রাক্ষুসে কামুক লোভী। কোথায় আমার বসুন্ধরা ওকে ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct