নবান্নে দেশ হাসে

বারী সুমন

এমনি সঙ্গীত শিল্পীর গানের মতো, চিত্রশিল্পীর কল্পণার রঙ-তুলিতে আঁকা বাংলার হেমন্তের এক প্রতিচ্ছবি। কার্তিক অগ্রহায়ন এই দুই মাস নিয়ে ঋতুচক্রে আবর্তিত হয় হেমন্তকাল। কার্তিকের শেষে অল্প অল্প শীতে কুয়াশায় যখন সব কিছু ধোয়াশার মতো মনে হয়, তখন ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছোট্ট বেলায়। হেমন্ত মানেই নতুন প্রাণের স্পন্দন, নতুন আমেজ। হেমন্ত ছাড়া এই আমেজ যেনো উপলব্ধি করাই যায়না। কার্তিকের শুরু থেকেই হালকা ঝিরঝিরে বাতাস জানিয়ে দেয় হেমন্তের সূচনা। বেলা ছোট হয়ে আসে। কর্মব্যস্ততা শেষ করার আগেই পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য দিনের সমাপ্তি ঘটিয়ে অস্ত যায়। হিম হিম ঝিরঝিরে শুষ্ক বাতাস শরীরকে আরও শুষ্ক করে তুলে। ত্বক খসখসে হয়ে যায়। পথঘাট আবার ধুলোয় ভরতে থাকে। হেমন্ত মানেই নতুন ধান ঘরে তোলার ব্যস্ততা। হেমন্ত মানেই কৃষাণ- কৃষাণীর ব্যস্ততা। কার্তিকের শেষ দিকে মাঠে মাঠে সোনালী ধান দেখা যায়। পাকতে শুরু করে কৃষকের মাঠের ধান। কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। ধান কাটার উপকরণ গুলো ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে থাকে। পুরোপুরি ধান পেকে যাওয়ার পর দল বেঁধে মাঠে যায় কৃষকরা। সকালের সূর্য উঠার আগেই কাস্তে হাতে নিয়ে মাঠে চলে যায় কৃষকগণ।

সকালের খাবার হিসেবে পান্তা ভাত পৌঁছে দেয় কৃষাণ বৌ। বাড়িতে ফুরসত নেই কৃষাণ বৌ-দেরও। তারাও ধান গোছাতে ব্যস্ত। ধান মাড়াই করা। ঝারা মোছা, ধান সেদ্ধ করা, রোদে শুকানো। সব মিলিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করে তারা। সেই ধান তুলতে আশে পাশের সবাই পাশাপাশি কাজ করে। সে কাজের ফাঁকে কত আনন্দ বেদনার গল্প লুকিয়ে থাকে। কত হাসি কান্নার গল্প জড়িয়ে থাকে তাতে। এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করার মতো নয়। শীতের দিন রোদ তেমন থাকে না। যতটুকু রোদ পাওয়া যায় তাতেই শুকাতে হয় স্বপ্নের ধান। বহুল আকাঙ্ক্ষিত সে ধান। সে ধানে কত স্বপ্ন জমা থাকে। অনেক ব্যস্ততায় বেশ কিছুদিনের কষ্টের পরে সে ধান ঘরে তুলে। ধান ঘরে তোলার পর শুরু হয় ঘরে ঘরে পিঠা পায়েসের আয়োজন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব জমে উঠে নতুন করে নতুন রুপে। কৃষাণ বৌ রা মনের আনন্দ নিয়ে বানায় নানান রকম পিঠা। কত রকমের পিঠা যে তৈরি করে তা বলে শেষ করা যাবে না।  এ বাড়ি ও বাড়ি বিলায় পিঠা। এসময় জামাইরা বেড়াতে আসে শ্বশুর বাড়ি। মেয়ের বাড়িতে পিঠা পায়েস পাঠায় বাবার বাড়ি থেকে। প্রতিবেশীদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে খায় পিঠা পায়েস। সারা বছর অল্প অল্প করে স্বপ্ন জমায় হেমন্তে ধান কাটার পর ধান বিক্রি করে কাপড়-চোপড়, ঘর- গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিস ক্রয় করবে। সাধ্য অনুযায়ী ক্রয়ও করে। সারা বছর বেড়ানোর ফুরসত না পেলেও হেমন্তে নতুন ধান ঘরে তোলার পর নতুন ধানের পিঠা পায়েস বানিয়ে বেড়ানোর ধুম পড়ে গ্রামে। পল্লীর চিরায়ত রুপে ভরে ওঠে বাংলার প্রতিটি ঘর। প্রতিটি ঘরে লেগে থাকে কৃষাণ-কৃষাণীর হাসি। হেমন্তের নবান্নের হাসিতে হেসে ওঠে পুরো বাংলা।

মধুচন্দ্রিমা শেষে গম্ভীরকে ‘সংসারের’ হাল ধরতে বললেন গাভাস্কার

বিকলাঙ্গ দম্পতির আবাসের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

জয়েন্ট বিডিও-র পরিদর্শনের পর শুরু হল বাঁধ মেরামতির কাজ