আপনজন ডেস্ক: মেলবোর্নে ভারত-পাকিস্তানের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের রেশ এখনো কাটেনি। সাবেক থেকে বর্তমান-অনেক ক্রিকেটারই এই ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছেন, বলছেন। বিরাট কোহলির ম্যাচ জেতানো ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসের ভূয়সী প্রশংসাও চলছে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গ্রেগ চ্যাপেল তাঁর দেশের সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এ কোহলির ইনিংসটি নিয়ে কলাম লিখেছেন। সেখানে লেখার শুরুটা এমন, ‘পবিত্র ভগবত গীতা হিন্দু ধর্মের সংশ্লেষণ। (ভগবত গীতা) নামটার আনুবাদিক অর্থ হয় “ঈশ্বরের গান।” টি-টোয়েন্টিতে যত ইনিংস আছে, তার মধ্যে কোহলির এ ইনিংসটি “ঈশ্বরের গান’-এর কাছাকাছি।’
মেলবোর্নে গত রোববার পাকিস্তানের ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ৬.১ ওভারে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। কোহলি-হার্দিক পান্ডিয়ার জুটিতে এখান থেকে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় তারা। শুরুতে প্রয়োজনীয় রান রেট তোলার ধারেকাছেও ছিল না ভারত। কিন্তু কোহলি ধীরে ধীরে আড়মোড়া ভেঙে হাত খুলে ইনিংসটি এমনভাবে সাজিয়েছেন, যেন চিত্রকরের তুলির আঁচড়! একটি শটও জোর করে খেলেননি। সবগুলোই ছিল চোখ ধাঁধানো ক্রিকেটীয় শট। এর মধ্যে ১৯তম ওভারে হারিস রউফের শেষ দুই বলে কোহলি যে দুটি ছক্কা মারেন, রবি শাস্ত্রীর চোখে তা, ‘ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খেলা অন্যতম সেরা শট।’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের মহারথী গ্রেগ চ্যাপেল কোহলির সে ম্যাচের ব্যাটিংয়ের ধরন বোঝাতে একটি উদাহরণ টেনেছেন, ‘একটা বিড়াল যেমন উলের বল নিয়ে খেলা করে, কোহলিও সেভাবেই খেলে পরের দিকে বিশেষজ্ঞের মতো পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণকে ছারখার করেছে...।’ ৭৪ বছর বয়সী চ্যাপেল সত্তর দশকের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আভিজাত্যপূর্ণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে নিবিড় মনঃসংযোগ এবং কুশলী টেকনিকজ্ঞানের জন্য খ্যাতি কুড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার (১৯৭০-১৯৮৪) হয়ে ৮৭ টেস্ট ও ৭৪ ওয়ানডে খেলা এই কিংবদন্তি। ব্যাটিং নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ বিশ্ব ক্রিকেটে সবাই শ্রদ্ধার চোখেই দেখেন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে চ্যাপেল ভাইদের মধ্যে ব্যাটিং-বিশ্লেষণে গ্রেগের নামডাকই বেশি। কোহলির ব্যাটিং নিয়ে কলামে গ্রেগ চ্যাপেল লিখেছেন, ‘গত রোববার রাতে কোহলি সুন্দর ব্যাটিংয়ে কোনোরকম ছাড় না দিয়ে প্রতিপক্ষকে যে নির্মমতার সঙ্গে চিড়ে চ্যাপ্টা করে ফেলল, তা আগের যুগের গ্রেটরা করতে পারত না। আমি জীবনে যত ক্রিকেট দেখেছি, তার মধ্যে আর কেউ এই ইনিংসের মতো এতটা শিল্পিত ব্যাট করতে পারেনি। কৌতুক করে এভাবেও বলা যায়, এই ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ইতিবাচকভাবে সবার দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। ব্যাটিংয়ের শৈল্পিকতার দিক থেকে যদি বলি, গত ১৫ বছরে যত ইনিংস দেখেছি তার মধ্যে সেরা। খুব আনন্দ পেয়েছি, আর এটা এমন একজন খেলেছেন, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে এই সংস্করণের অন্যতম কট্টর সমর্থক এবং অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct