২০ বছর আগে সোনিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে জিতেন্দ্র প্রসাদ যেখানে ১০০ ভোটও টানতে পারেননি, শশী থারুর সেখানে সহস্রাধিক ভোট সংগ্রহ করে বোঝালেন, দলের স্বার্থে যেসব সংস্কারের কথা তাঁরা বলে আসছেন, তাতে অনেকের সায় রয়েছে। দ্বিতীয় খাড়গে ভোটের আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, দলের স্বার্থে গান্ধী পরিবারের পরামর্শ সব সময় নেবেন। দলের জন্মাবধি যে পরিবার যাবতীয় ভালোমন্দের সঙ্গে জড়িত, যাঁদের এত অবদান ও ত্যাগ স্বীকার, তাঁদের উপেক্ষা করা মূর্খতা। কংগ্রেসকে নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শেষ কিস্তি।
চতুর্থ কৌতূহলটি থারুরের ভবিষ্যৎ নিয়ে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর কেউ কেউ তাঁকে ‘ধারাবাহিকতার স্বার্থে’ সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভোটাভুটি এড়িয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি বেছে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন তাঁরা। বলেছিলেন, সবার জন্য ওটাই ‘মঙ্গলজনক’। ওটাই দলের ঐতিহ্য। থারুর মানেননি। প্রচারের সময় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। এমনকি ভোটে কারচুপিরও। ভোট মিটতে প্রত্যাশিত পাটকেল তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে তিনি ‘দুমুখো’। দলে এক কথা বলেছেন, মিডিয়ায় অন্য কথা। অতীতে ভোটে আগ্রহী চ্যালেঞ্জারদের রাজনৈতিক ভাগ্য যেভাবে বদলেছে, যেভাবে স্থিতাবস্থা রক্ষাকারী অনুগতরা সমস্বরে ‘বিদ্রোহীদের’ কোণঠাসা করতে চেয়েছেন, শশী থারুরের ভাগ্যে তেমন কিছু রয়েছে কি না, জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে। দেখতে হবে, অনুগতরা থারুরকে ব্রাত্য করতে চাইলে পরিবার তাতে সায় দেয় কি না। খাড়গে নিজেও থারুরকে সঙ্গী করতে আগ্রহী হন কি না, দেখতে হবে।
হারার পর থারুর নিজে ‘নতুন সভাপতি প্রবীণ, অভিজ্ঞ ও স্থিতধী’ বলে জানিয়েছেন, ‘তাঁর নেতৃত্বে আমরা সবাই মিলে দলকে নতুন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’ অর্থাৎ বুঝিয়েছেন, নতুন টিমের সদস্য হতে তিনি আগ্রহী। নেতৃত্বের ভাবনা ইতিবাচক হলে থারুরদের সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় পা ফেলতে পারে। নেতিবাচক হলে সেই ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’। জিতলে কী করতেন শশী, সে কথা নির্বাচনী ইশতেহারে জানিয়েছিলেন। দল ছেড়ে বিজেপির দিকে যাঁরা পা বাড়িয়েছেন, তাঁদের ঘরে ধরে রাখা। খাড়গেরও প্রথম কাজ সেটাই হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তাঁকে দ্রুত সমাধান করতে হবে রাজস্থান নামক ধাঁধার। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটের দূরত্ব মেটানো বৃত্তকে চতুষ্কোণে পরিণত করার মতোই কঠিন। অথচ দুজনই দলের সম্পদ। আগামী বছরের শেষে রাজস্থানে ভোট। উজ্জ্বল কংগ্রেস জেগে রয়েছে এই রাজস্থান ও ছত্তিশগড়েই। অন্যত্র টিমটিমে। এটা এখন নিশ্চিত, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত খাড়গের হাতেই সরকারিভাবে থাকবে দল পরিচালনার ব্যাটন। এ সময়ের মধ্যে ১১টি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হবে, যার অন্যতম তাঁর নিজের রাজ্য কর্ণাটক। বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ এই রাজ্যে কংগ্রেসের সামনে রয়েছে। দল যদিও প্রদেশ সভাপতি ডি কে শিবকুমার ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার মধ্যে বিভাজিত। সভাপতি হিসেবে খাড়গের গুরুদায়িত্ব শ্যাম ও কুল দুটোই রক্ষা করা। (সমাপ্ত,,,)
সৌ: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct