আপনজন ডেস্ক: মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির খারক রিওয়ারা সাতবাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম ঘুরে এসে তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, শুক্রবার ২১ অক্টোবর এই এলাকায় যখন মুসলমানরা নামাজ পড়তে গিয়েছিল সেই সময় বিনা নোটিশে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী দুই ডজনেরও বেশি বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার, একদল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কর্মী ছাতারপুরের ফতেহপুর বেরির মধ্যে পড়ে যাওয়া এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং জানতে পারেন যে ডিডিএ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর শক্তি ব্যবহার করে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠীর কর্মীদের নিয়ে গঠিত। এই দলে আছেন, অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়নস (এআইসিসিটিইউ) থেকে আকাশ ভট্টাচার্য, অল ইন্ডিয়া লয়ার্স ফর জাস্টিস (আইএলএজ) থেকে অনুপরাধা, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসএ) থেকে নওশাদ আহমেদ রাজা এবং অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেন অ্যাসোসিয়েশন (এআইপিডব্লিউএ) থেকে সুমন ঘোষ। এক বিবৃতিতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের পক্ষে বলা হয়েছে, উচ্ছেদ করার সময় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখালে দিল্লি পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং মহিলা সহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে। পুরুষ পুলিশ নির্লজ্জভাবে বিক্ষোভকারী মহিলা বাসিন্দাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ভেঙে পড়া বাড়িগুলির বাসিন্দাদের বাড়ির জিনিসপত্র উদ্ধারের জন্যও সময় দেওয়া হয়নি। ডিডিএ কর্মকর্তারা দিওয়ালির পরে বুলডোজার নিয়ে ফিরে আসার এবং আরও বাড়ি ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া লয়ার্স ফর জাস্টিস-এর কর্ণধার অনুপরাধা বলেন, পুরুষ পুলিশ কর্মীদের দ্বারা মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন মহিলা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এক মহিলাকে থানায় নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘সব নারীই বলছিল যে, তারা যখন তাদের গৃহস্থালীর যন্ত্রপাতি বের করতে সময় দেওয়া হোক। কিন্তু তখন তাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। বাসিন্দারা কোনও ধ্বংসের আদেশ বা নোটিশ দেখতে চাইলে তাদের উপর এ ধরনের ব্যভহার করা হয়। বাসিন্দাদের মারধরের পর ভাঙচুর চালানো হয়। তার জন বিপুল সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ অনুপরাধার।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কর্মীরা জানতে পেরেছেন যে ডিডিএ কর্তৃপক্ষ দাবি করছে যে জমিটি কোনও বেসরকারি ডিলার সংস্থার অন্তর্গত। অথচ আদালত জমিটি কার এবং জমিটি কতটা দখল করা হয়েছে সে সম্পর্কে জমিটি জরিপ করার নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু কোনও সমীক্ষা করা হয়নি বা তার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান অনুপরাধা। যদিও , ২০১৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট কর্তৃক একটি আদেশ জারি করে আইন অনুযায়ী অননুমোদিত নির্মাণগুলি অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কর্মীরা বলেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার রাজ্যে যে বুলডোজার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তার আগে বাসিন্দাদের হুমকি দিয়ে জানিয়েছিল্ কিন্তু দিল্লি পুলিশ সেটাও করেনি। এ বিষয়ে, আম আদমি পার্টির (এএপি) স্থানীয় বিধায়ক করতার সিং তানওয়ারও বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেন। ডিডিএ-র এই পদক্ষেপকে “মুসলিম-বিরোধী” এবং “দরিদ্র-বিরোধী” হিসাবে অভিহিত করে সিপিআই এমএল (লিবারেশন) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাার দাবি করেন অাদালতের নির্দেশ ছাড়া যেন বাড়ি ভাঙা না হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায় ও দোষী পুলিশদের শাস্তি দাবি করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct