ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এবং ক্লাসের ভূগোল বইয়েও পড়েছি, ভারতবর্ষের ম্যাপে ও দেখেছি আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। শুধু ভূগোল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম না। ইতিহাসেও পড়েছি। ছোটবেলা থেকে বড়দের মুখে শুনে এসেছি রবি রামের দ্বীপ চালান আর ক্ষুদিরামের ফাঁসি। কথাগুলো শুনে মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন জেগে উঠতো। শুধু রবিরাম কেন? রবি রামের মতো আমাদের এই জন্মভূমি ভারতবর্ষের শতশত স্বাধীনতা সংগ্রামীকে দানব ব্রিটিশ ইংরেজ দ্বীপ চালান বা দ্বীপান্তর পাঠিয়ে দিতো আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। অনেকে আবার আন্দামান কে কালাপানির দেশও বলে থাকে। সেই আন্দামান-নিকোবর সম্পর্কে জানার কৌতূহল অনেকদিনের। সরেজমিনে দেখার সেই সৌভাগ্য এসেই গেল। লিখেছেন মোঃ ইসরাইল সেখ
তারপরের দিন রওনা হলাম তুসনাবাদের উদ্দেশ্যে বাসে চেপে। বাস থেকে নেমে আমার সাথে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে গেল। কাণ্ডটি হল তুসনাবাদ বাজারে নেমে পাম্প ম্যানের খোঁজ করতে গিয়ে স্থানীয় প্রধানের সাথে দেখা হয়। তখন প্রধান বলেন - কোথায় বাড়ি? এখানে কি করতে এসেছো? আমি প্রধানকে সব কিছু বলার পরের। প্রধান বলেন সরকারের কোন অর্ডার কপি আছে কি? আমি - - বলি আছে। প্রধান বলেন তোমার বাড়ি মেন লাইনে? বলি - - হ্যাঁ। আমি ভারত সরকারের জল জীবন মিশনের অধীনে কাজে এসেছি। তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের অর্ডার কপি দেখাই। প্রধান বলেন আন্দামান সরকারের কোন অর্ডার কপি আছে কি?
বলি - - না। পি ডাব্লিউ ডি অফিসের বড়বাবুর ফোন নাম্বার আছে। আপনি বড়বাবুর সাথে ফোনে কথা বলতে পারেন। আমি কথা বলিয়ে দিই।কথা বলিয়ে দিলেও প্রধান বিশ্বাস করতে পারেননি আমাকে। তাই আমাকে প্রধান পঞ্চায়েত অফিসে আটকে রাখেন। তারপর প্রধান বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে জানতে পারেন যে আমি সঠিক কথা বলেছি। সত্যিই বড় বাবুর সাথে প্রধানের কথা বলিয়ে দিয়েছি। তখন প্রধান আমাকে ছেড়ে দেন এবং একজনকে সঙ্গে দেন। যাতে করে আমাকে বাড়ি বাড়ি নিয়ে গিয়ে কাজে সাহায্য করে। তুসনাবাদে যে কাজ করেছিলাম একটি বাড়ির সমতল পাইনি। সেখানে অনেক কষ্ট করে কাজ করে হোটেলে ফিরে আসি। তৃতীয় দিন কাজে বার হলাম হামফ্রীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। এখানে গিয়ে এক অজানা তথ্য জানতে পারি যে তথ্য আমি গুগল এবং ইউটিউবে কোনদিন পাইনি। যে তথ্য জানতে পারি তার ঘটনা শুনে গায়ের লোম কাঁটা কাঁটা হয়ে গিয়েছিল। নিজের কাজ শেষ করে যেখানে ঘটনা ঘটেছিল সেখানকার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করি। হাঁটতে হাঁটতে সাইন বোর্ডের কাছে পৌছালাম। বোর্ডে লেখা আছে বলিদান বেদি। সাইন বোর্ডে দিক নির্দেশ দেখে সেই দিকে হাঁটতে শুরু করি। প্রায় 10 মিনিট হেঁটে গিয়ে পৌছায়। গিয়ে দেখি কোন মানুষ জন নাই। তখন মনে একটু ভয় ঢুকে গেল। কোথায় এলাম। আমার কাজের সাথী একজন মেয়ে তাই তাকে কিছু বুঝতে দিইনি। বললাম আগিয়ে চলো। দুইজনে আগিয়ে দেখি একজন যুবক ফোনে কথা বলছে। জিজ্ঞাসা করি -- আপনি কে?উত্তরে জানায় -- আমি এখানে চাকরি করি। বাংলা ভাষাতেই বলল। তখন তার কাছ থেকে সব কিছু জানার পর দুইজনে বলিদান বেদি কাছে গিয়ে দেখি 1944 সালে 30 শে জানুয়ারি এই স্থানে ভারতের চল্লিশ জন বীর সন্তানকে জাপানি ফোর্স গুলি করে শহীদ করেছিল। বীর শহীদের স্যালুট জানিয়ে তারপর ভালো করে আশপাশ ঘুরেঘুরে দেখি এবং ছবি তুলি। বলিদান বেদীর ভূমিকা বুঝতে ইংরেজিতে যে লেখা আছে তা উল্লেখ করছি।
Introduction
The Second World War in Europe was on, but it had created little impact on the lives of the people of the Andaman and Nicobar Islands. During the War, Japan declared war against Britain and U.S.A. The destruction of the American Naval base at Pearl Harbor was followed by the fall of Singapore and Burma at the hands of Japanese by the middle of February 1942. It was during this time, that it left little doubt in anyone’s minds that now it was only a question of days before the Bay Islands would fall into the hands of the Japanese. The British Government in Andaman realized that they were in no position to defend the Islands. So they first removed the solitary Gurkha Battalion that was stationed in the Andaman and then ordered a general evacuation.
The blow fell on the 23rd March 1942 when the ship of Imperial Japanese Navy swooped on the Islands of Ross and Chatham. Within the next two days the Japanese completed the occupation of Port Blair making the beginning of Japanese rule in the Islands. But this period unfortunately turned out to be the days of fears and tears among the inhabitants of the Andaman and Nicobar Islands who underwent untold sufferings and sacrifices at the hands of the Japanese Imperialist force contrary to the expectations and hopes.
বলিদান বেদীতে ইংরেজিতে লেখা আছে : BALIDAN VEDI
Dedicated in gallant memory of the martyrs of Indian independence leagues shot dead and buried by the Japanese forces on the 30 th January 1944 in British counter espionage to eliminate anti British during world war ll .
এরপর চল্লিশ জন শহীদের নাম লেখা আছে। এক নন্বরে আছে আব্দুল জলিল, তারপর একে একে সকল শহীদের নাম লেখা আছে। তাঁদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শহীদের নাম উল্লেখ করছি একে একে। অনন্ত লাল, বাচান সিং, বাক্ষিস সিং, বসন্ত লাল, ডলিপ সিং, ফারজান্ত আলি, ফজল বেগ, ফজল হোসেন, পারস রাম, রতন চাঁদ, নুর মাঝি, নুর হোসেন মল্লিক, নুর আহম্মেদ, হিরা সিং, মোহর সিং, সাহিব সিং, রাজ রতন দাস, উত্তম সিং প্রমুখের নাম। বলিদান বেদি দেখার পর প্রবেশ করি মিউজিয়ামের ভিতরে। কোন প্রবেশ মূল্য নেই। মিউজিয়ামের প্রবেশ করে ডানদিকে তাকিয়ে দেখি চল্লিশ জন শহীদের মধ্যে কিছু জনের ছবি। তখন জিজ্ঞাসা করি মিউজিয়ামের দায়িত্ব থাকা যুবকে -- সকল শহীদের ছবি নাই কেন? উত্তর আসে সকল শহীদের ছবি পাওয়া যায়নি সেই সময়ে। প্রথমে শহীদের ছবি দেখে স্যালুট জানাই। এরপর একে একে দেখি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আন্দামানে আগমনের ছবি সহ আরো বিভিন্ন ছবি। তারপর দ্বিতীয় তলায় উঠে যায়। এই দ্বিতীয় তলায় দেখি ইংরেজদের আমলের টাকা, চিঠিপত্র, ইংরেজদের ব্যবহূত নানান জিনিস পত্র। সব কিছু দেখার পর বাসে চড়ে হোটেলে ফিরে আসি। পরের দিন যাই হারপট্টাবাদ গ্রামে। এই গ্রামটি তিলুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ হতে ভারতে এসেছিল। এই গ্রামের দূরে বাস করে জারোয়া সম্প্রদায়। যে জারোয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেক কথা আমরা ইউটিউব ও গুগলে শুনে থাকি। সেই জারোয়াদের বসবাস এই হারপাট্টাবাদ গ্রামের কাছে জঙ্গলে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct