আপনজন ডেস্ক: অসমের গোয়ালপাড়ায় বেসরকারি ‘মিয়া মিউজিয়াম’ স্থাপন নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-এর অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় জেলা প্রশাসন মঙ্গলবার যাদুঘরটি সিল করে দিয়েছে। রবিবার জেলার গোয়ালপাড়ার দাপকারভিটা এলাকায় এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়। ‘মিয়া’ শব্দটি মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যবহার করা হয়। ১৮৯০-এর দশকের শেষের দিকে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় পাশে ব্রিটিশরা তাদের বাণিজ্যিক কৃষি এবং অন্যান্য কাজের জন্য নিয়ে আসার পরে বাঙালি বা বঙ্গ-বংশোদ্ভূত মুসলমানরা সেখানে বসতি স্থাপন করে। তাদের তৈরি মিয়া যাদুঘরের দরজায় লক্ষ্মীপুর রাজস্ব সার্কেলের একটি নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়েছে: ‘ডিসির নির্দেশ অনুযায়ী দাপকারভিটা গ্রামের মোহর আলী এস/ও সোমেশ আলীর এই পিএমএওয়াই-জি বাড়িটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়া মিউজিয়াম’ স্থাপনের জন্য অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত শুরু করবে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যারা মিয়া মিউজিয়াম স্থাপন করেছেন তাদের সরকারের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তা দিতে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি সব সময় বলে আসছেন, মিয়া কবিতার উত্থান, মিয়া স্কুলগুলো অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করছে। এ ধরনের ঘটনা আদিবাসী সমাজের জন্য ভালো লক্ষণ নয় উল্লেখ করে সরমা বলেন, ‘যারাই নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক বলে মনে করে, তাদের অবশ্যই সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এ ধরনের উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের কাছে এই মিউজিয়ামটি ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক প্রশান্ত ফুকান। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, যিনি অসম ভাষাগত সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারপার্সনও, তিনি রাজ্য সরকারকে মিউজিয়াম এবং এটি স্থাপনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ‘মিয়া মিউজিয়াম’-কে সমর্থন করে দক্ষিণ অসমের করিমগঞ্জ উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ্যা দে পুরকায়স্থ বলেন, ‘অসমে যে বিপুল সংখ্যক বাঙালি ভোট দেন, তাদের সংস্কৃতি ও পরিচয় সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শেরমান আলি আহমেদ এর আগে গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে একটি “মিয়া যাদুঘর” স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় কলাক্ষেত্রটি বহুজাতিক অসমেরর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। অসম মিয়া (আসোমিয়া) পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘মিয়া যাদুঘর’-এ, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ এবং গৃহস্থালী সামগ্রী প্রদর্শন করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct