আপনজন ডেস্ক: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে প্রায় তিন দশক কাটিয়ে দিয়েছিলেন ভিনদেশের জঙ্গলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু বছর পরেও তিনি বিশ্বাস করেননি- যুদ্ধ শেষ! সেনা কর্মকর্তার আদেশ মেনে ওই জঙ্গলেই থেকে গিয়েছিলেন জাপানের সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিরু ওনোদা। সেখানেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন জীবনের ২৯টি বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু বছর পর হিরুর ব্যাপারে জানতে পারে জাপান। ১৯৫৯ সালে তাকে সরকারিভাবে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেছিল তৎকালীন জাপান সরকার। তবে তার অনুসন্ধান চালিয়ে যান সে দেশের নোরিয়ো সুজুকি নামে একজন ছাত্র। ১৯৭৪ সালে তিনিই খুঁজে পান হিরুকে।
ফিলিপাইনের জঙ্গল থেকে জাপানে ফেরার জন্য আবেদন-নিবেদন করলেও সুজুকির কথায় কর্ণপাত করেননি হিরু। এমনকি সেই ১৯৭৪ সালেও তার বিশ্বাস হয়নি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে। তখনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন হিরু। ১৯৪২ সালে জাপানের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন হিরু। দুই বছর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝে তাকে ফিলিপাইনে পাঠানো হয়েছিল। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার হিরুকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, ওই জঙ্গলে ঘাঁটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে। বলা হয়েছিল, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শেষ নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে। সেটাই করেছিলেন হিরু। ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ফিলিপাইনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে লুবাং দ্বীপের জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছিলেন হিরু। ম্যানিলা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের ওই দ্বীপে শুরুতে তার সঙ্গে আরো তিনজন জাপানি সেনাকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন। একে একে তারা মারা যান। কর্তব্য পালনে একাই জঙ্গলে থেকে যান হিরু। রোগাপাতলা চেহারার ২২ বছরের হিরুর সঙ্গী বলতে ছিল একটি রাইফেল এবং তলোয়ার। গেরিলা যুদ্ধে সিদ্ধহস্ত হিরু সেই তলোয়ারে নিয়মিত শাণ দিতেন। শত্রুকে শেষ করতে রাইফেলটিকেও বাগিয়ে রাখতেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct