আপনজন ডেস্ক: ইতিহাস সৃষ্টি করে ব্রিটেনে নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম এশিয়ান ঋষি সুনাক। এটাই ব্রিটেনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে প্রথম একজন ভারতীয়ের অভিষেক। কনজার্ভেটিভ দলের প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মরডান্ট শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে ঋষি সুনাককে এইমাত্র প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন ১৯২২ কমিটির চেয়ার স্যার গ্রাহাম ব্রাডি। তিনি বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা একজন মাত্র বৈধ প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছি। ফলে ঋষি সুনাককে নির্বাচিত ঘোষণা করছি। মাত্র ৬ সপ্তাহ আগের কথা। তখন ব্রিটিশ ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ দলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিতের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসা ছিলেন ঋষি সুনাক এবং লিজ ট্রাস। দু’জনেরই প্রায় সমান সমান সুযোগ ছিল। যখন নির্বাচিত হিসেবে লিজ ট্রাসের নাম ঘোষণা করা হল, তখন ঋষি সুনাক অন্যদের সঙ্গে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। তার মুখেও হাসি ছিল। কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, সেই হাসির পিছনে না পাওয়ার এক বেদনা রয়ে গেছে। মাত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে সব ওলট-পালট হয়ে যাবে, তা সম্ভবত নিজেও তখন ভাবেননি ঋষি সুনাক।
অবশেষে তা-ই হয়েছে। ব্রিটেনের, বিশেষ করে কনজার্ভেটিভ পার্টিতে যেন ঝড় বয়ে গেছে। সেই ঝড়ে টিকে থাকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনি বাধ্য হন পদত্যাগে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। কে কে হবেন প্রার্থী তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। আবার কনজার্ভেটিভ পার্টির ভিতরে জমে ওঠে আভ্যন্তরীণ রাজনীতি। প্রকাশ্যে আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন পেনি মরডান্ট। এরই মধ্যে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবকাশ সংক্ষিপ্ত করে শনিবার দেশে ফেরেন বরিস জনসন। তিনিও প্রার্থী হবেন এমনটাই দাবি করেন তার অনুগত এমপিরা। এমন অবস্থায় তিনি টানা তিন ঘন্টা বৈঠক করেন ঋষি সুনাকের সঙ্গে। রবিবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি ঘোষণা দেন, নির্বাচন করবেন না। ফলে ঋষি সুনাকের সামনে পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। বলতে গেলে, তখনই ঋষি সুনাকের সামনে পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ, ততক্ষণে কমপক্ষে ১২৫ জন এমপির সমর্থন পেয়ে গেছেন তিনি। সোমবার নির্ধারিত সময়ের আগে তিনি পেয়ে যান ১৯৪ জনের সমর্থন। এই পদে মনোনয়নের জন্য কমপক্ষে ১০০ এমপির সমর্থন অত্যাবশ্যক ছিল। তা পেয়ে গিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ঋষি সুনাক। ঋষি সুনাক তা অর্জন করে ফেলার পর কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে পেনি মরডান্টের। সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল দুটার মধ্যে তিনি ১০০ এমপির সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলেন। তবে তারা ৯০ জনের বেশি এমপির সমর্থন তখন পেয়েছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু স্কাই নিউজ তখন বলছে, সরকারি হিসেবে তিনি পেয়েছেন ২৫ জন এমপির সমর্থন। এরই মধ্যে পেনি মরডান্টের প্রথম সারির সমর্থক জর্জ ফ্রিম্যান তাকে ঋষি সুনাকের সঙ্গে চুক্তি করার পরামর্শ দেন। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিম্যান পক্ষ ত্যাগ করেন। তিনি ঋষি সুনাককে সমর্থন দেন। এর ফলে সুনাকের প্রধানমন্ত্রীর পথ সুগম হয়ে যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct