আদুরি
বারী সুমন
ভাদ্রের শেষ, আশ্বিনের শুরু। ধানের ক্ষেতগুলো সবুজে সবুজে ভরে গেছে। বারান্দায় বসে বাতাসে ঢেউ খেলানো ধান ক্ষেত দেখছে আদুরি। পাশেই একটা শিউলি ফুল গাছ। শিউলি ফোটার এখনই সময়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শিউলি ফোটে। গাছের তলা ভরে যায় শিউলি ফুলে। আদুরি প্রতিদিন সে ফুল কুড়িয়ে আনে, মালা গাঁথে শিউলির। তবে সে মালা শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। পাশের বাড়ির নীরা আপুর কাছে শুনেছে চিনির পানিতে ভিজিয়ে রাখলে নাকি দুএকদিন তাজা থাকে শিউলি ফুল। প্রতিদিন সকালে আদুরি খুব যত্ন করে ফুল কুড়িয়ে আনে। সে ফুল দিয়ে মালা গাঁথে কখনও বা চিনির পানিতে ভিজিয়ে রাখে। ফুলগুলো সতেজ থাকে। নতুন একটা আইডিয়া শিখেছে তাই আদুরির খুব আনন্দ। আরেকটা বিষয় আদুরি খেয়াল করে দেখলো প্রতিদিনই কিছু ছেলে মেয়ে আসে শিউলি তলায়। কুড়ানো অবশিষ্ট কিছু ফুল নিয়ে ওরা চলে যায়। হাতের পলিথিন বা ঝুড়িতে আরও নানা রকম ফুল থাকে। আদুরি ভাবে এই ফুল দিয়ে ওরা কি করে। কৌতুহল নিবারণের জন্য একদিন ফুল কুড়ানিদের ডেকে আনে আদুরি। জিজ্ঞেস করে এই ফুল দিয়ে তোমরা কিরো? ওরা বলে এগুলো দিয়ে আমরা মালা গাঁথি। শহরের পার্ক বা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে এগুলো বিক্রি করি। এগুলো দিয়ে যে টাকা পাই তা আমাদের সংসারের চাল ডালের যোগান দেয়। কথাগুলো শুনে আদুরির খুব মন খারাপ হলো। যে ফুল আমি সৌখিনতার জন্য সাজিয়ে রাখি সেই ফুল বিক্রি করে ওদের জীবন চলে! তাই সে মনে মনে ভাবলো এই ফুল সে আর কুড়াবেনা, রেখে দেবে ওদের জন্য। ফুলকুড়ানিদের ডেকে বলে দেয় কাল থেকে এখানে যত ফুল পড়বে সব তোমাদের জন্য থাকবে৷ আমি কুড়াবো না। তোমরা কুড়িয়ে নিয়ে যাবে। মালা গেঁথে একটা মালা আমার কাছে বিক্রি করবে আর বাকিগুলো তোমাদের ইচ্ছেমতো বিক্রি করো। ফুল কুড়ানিরা এতো খুশি হলো যে ওদের চোখে পানি চলে আসলো। পরদিন থেকে সকালে বারান্দায় বসে থাকে আদুরি, সবুজ ঘাসের গালিচা থেকে একটা একটা শুভ্র শিউলি কুড়িয়ে নেয় ফুলকুড়ানিরা। দেখে চোখ তৃপ্ত হয় আদুরির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct