অনন্ত ছোঁয়া
মোঃ আব্দুর রহমান
একটু আড়াল হলো পারুল। কারণ দ্রুত একটি মোটর সাইকেল পুকুরের পাশের রাস্তাটি দিয়ে বেরিয়েগেলো। তাতে দুইজন লোক বসা আছে। একজন মাঝারী বয়সের, অন্যজন যুবক বয়সী এবং দেখতেও বেশ সুদর্শন বলে মনে হলো..। অবশ্য তাদেরকে সে আগে কখনও এই পাড়ায় দেখেছে বলে মনে হয়না। কারো বাড়ীতে অতিথি হবে হয়তো। যাইহোক এটা তার ভাবার বিষয় নয় এবং ভাবতেও চায়না । তাই চুপ করে পুকুর ঘাটলায় ডুমুর গাছের পাশে বসে পড়লো পারুল। শরতের প্রখর রৌদ্রে যদিও বেশ তাপ রয়েছে, তবে মিস্টতার আঁচটাও এই মুহুর্তে চুটিয়ে অনুভব করতে পারছে সে। কতগুলি পাতিহাস হেলেদুলে সাঁতার কাটছে,আবার কখনও ডুবদিয়ে শামুক খুটছে। যেই ঢেউতে ডুমুরের ফলগুলি পানিতে নৌকার মতো দুলছে আর দুলছে। সাথে দুলছে লাল শাপলার ছড়িয়ে থাকা পাতাগুলি। এভাবে দুপুরে বসে থাকাটা কিন্তু পারুলের রোজকার অভ্যাস। তবে কাল আর এখানে বসা হবেনা। কারণ কালতো তার বিয়ে।
এর ভিতরেই পারুল বলে বাড়ীর ভিতর থেকে ডাক পড়লো। “জী মা আসছি” বলেই উঠতে হলো তাকে। ভিতরে যেতেই চুপিচুপি মা বললো,” তোর শ্বশুর বাড়ীর থেকে লোক এসেছে। এখনতো কারেন্ট নেই তাই ওরা উঠোনেই বসেছে। যা ওদের জন্য শরবতটা নিয়ে যা।” আমি পারবোনা বলেই ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে লজ্জায় পালালো পারুল।যে মেয়েটি পারিবারিক শাসনের মধ্যে এতদিন বড় হয়েছে, নিজের চেহারাটাকে পরপুরুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছে- তার জন্য ব্যাপারটা একটু কঠিন সাধ্য ব্যাপারই বটে। তবে শেষপর্যন্ত মা এবং ভাবীর পীড়াপীড়িতে যেতেই হলো পারুলকে। দুই গ্লাস রুআপজা এবং লাল সেলোয়ার কামিজ পড়ে তাঁদের সামনে এলো পারুল। দুইজন লোক তাঁকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। এ যেন ঘর থেকে বেরিয়ে এলো কোন লাল পরি! কোন সাজগোজ নেই, কোন পারফিউম নেই, তবে হ্যা উঠোনের বকুলের মৌ মৌ গন্ধে পুরো বাড়ীটা যেন ভরেগেছে। এবার একটু তাঁদের দিকে তাকালো পারুল। সে কি! এই দুজনকেইতো সে একটু আগে দেখেছে..। এবার নীরবতার বরফ ভেঙ্গে মধ্য বয়সী লোকটি পরিচয় দিলো,”আমি বড়ের দুলাভাই আর এ অবশ্য বড়ের খালাতো ভাই লেবু মিয়া।” লেবু মিয়া ভাবী বলে সম্বোধন করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সালাম দিতে একটুও ভুল করলোনা। তাঁদের দুজনকে বসতে বললো পারুল এবং হাতে সরবত তুলেদিলো। পারুলকেও পাশের চেয়ারটায় বসতে বললো লেবু মিয়া। কিন্তু পারুল বললো, “না আমি এখানে দাড়াই আপনারা বরং বসুন।”
লেবু মিয়া জানালো। ভাবী আমি আসলেও একটি চাকুরী করি। আমার ছুটি শেষ। কাল আমাকে কর্মস্থলে ফিরতে হবে, আপনাদের বিয়েতে আসতে পারবোনা। তাই ভাবলাম আজ অন্তত আপনাকে এক নজর দেখে যাই। তবে মাশাআল্লাহ। ভাবী আপনি খুব সুন্দর! নিশ্চই আমার ভাইটা খুব ভাগ্যবান! দোয়াকরি আপনারা অনেক সুখে থাকবেন। তারপর একঢোকে সরবতটা শেষ করে লেবুু মিয়া আল্লাহর কাছে শুকুরিয়া আদায় করে বললো এমনটাই চেয়েছিলাম। এরপর পারুলের দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলো। পারুল গ্লাসটা ধরলোও। তবে লেবু মিয়া আর গ্লাসটি ছাড়ছেনা। সে পারুলের দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলো! পারুল সরে যেতে চাইলো। কিন্তু লেবু মিয়া ভাবী দাঁড়ান পিঁপড়া বলে, পারুলের হাতচেপে ধরে গালটা হাত দিয়ে ডলে দিয়ে বললো আমার ভাবীকে কামড়াইস তাই না, আর কামড়াবি। কিন্তু পারুলের বুঝতে বাকী রইলোনা, পিঁপড়ে মারার নাম করে তার হবু দেবর তার গাল ছুঁয়েছে। তাই ঠিক এবার পারুল দৌঁড়ে ঘরে পালালো।এদিকে এমন আচরনের জন্য অবশ্য লেবু মিয়ার দুলাভাই এতক্ষন অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও, পারুল যাওয়ার পর ঠিকই কিছু তিতে কথা শুনিয়ে দিলেন লেবু মিয়াকে।
এবার বিদায় নেবার পালা। পারুলের মা বললো, তোমরা আজ থাকলেই পারতে বাবা। কিন্তু তাদের পক্ষে মোটেই থাকা সম্ভব নয়,লেবু মিয়াকে কাল কর্মস্থলে ফিরতেই হবে সেটা বুঝিয়ে বললেন তাঁর দুলাভাই। তবে তারা পারুলের কাছ থেকে আর একবার বিদায় নিতে চাইছেন। কিন্তু পারুল লজ্জায় আর বাহিরে আসছেনা। অবশেষে পারুলের মা ডাকার পরে বাহিরে এসে নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো পারুল। লেবু মিয়া বললো “ঠিক আছে ভাবী আমিতো কাল চলেযাবো। আবার কবে দেখা হবে...। তবে একটু কাগজ কলম দিন, আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে যাই। মনে চাইলে কখনও ফোন দিবেন।পারুলের মা বললো,খুব সুন্দর কথা বলেছো বাবা। যাতো মা পারুল কাগজ কলমটা এনে দে মা, মোবাইল নম্বরটা দিয়ে যাক মাঝে মাঝে কথা বলা যাবে।লেবু মিয়া মোবাইল নম্বরটা লিখে খাতাটা পারুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ভাবী একটু পড়ে দেখেন বুঝা যায় কিনা। ঠিক তখন পারুল খাতার দিকে তাকালো এবং পড়ার চেষ্টা করলো,”আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এতোক্ষন মিথ্যা বলেছি, আসলেও আপনাকে বিয়ের আগে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে, আগামীকাল এই লেবু মিয়ার সাথেই আপনার বিয়ে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এটা পড়েই পারুল আবার দৌড়ে ঘরে পালালো এবং আয়নার সামনে দুই হাতে মুখটা ঢেকে দাঁড়িয়ে রইলো। এবার আছতে আছতে হাতটা সরিয়ে লেবু মিয়ার ছুঁয়ে দেওয়া জায়গাটা দেখার চেষ্টা করলো এবং ভাবতে লাগলো শুধু আগামী দিনটি নয় আগামী দিনগুলির কথাও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct