ইউক্রেন যুদ্ধের রাশিয়ার সৈন্য, সামরিক মজুত, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সব ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ের জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরানের শরণাপন্ন হন। ইরানের শাসকদের এখন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পুতিনের কর্মকাণ্ড, ইরানের নেতৃত্ব যেটিকে জাতীয় স্বার্থ বলছে, তা অর্জনে বড় ধরনের সহায়তা করবে। তাই যদ্ধে যেন বিজয়ীর ভূমিকায় ইরান। এ নিয়ে লিখেছেন অ্যারন পিলকিংটন। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেন যুদ্ধ একটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ অর্জনে সহায়তা করছে। সেই দেশটা রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন নয়। সেই দেশটা হলো ইরান। ১৭ অক্টোবর এ বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইরানে তৈরি ড্রোন দিয়ে সেই দিন সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির সদর দপ্তর ধ্বংস করতে রাশিয়া ইরানি ড্রোন ব্যবহার করে। এ ছাড়া ইরানি ড্রোনের হামলায় চারজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হন। এই যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থক ইরান। ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বিষয়ে একজন সামরিক বিশ্লেষক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে, রাশিয়াকে ইরান যে ড্রোন দিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ক্ষেত্রে অনেক বড় কিছু। গত আগস্ট মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ ছয় মাসে এসে পড়লে দেখা গেল রাশিয়ার সৈন্য, সামরিক মজুত, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সব ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ের জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরানের শরণাপন্ন হন। ইরানের শাসকদের এখন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পুতিনের কর্মকাণ্ড, ইরানের নেতৃত্ব যেটিকে জাতীয় স্বার্থ বলছে, তা অর্জনে বড় ধরনের সহায়তা করবে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর পর থেকে ইরানের নেতারা মনে করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইরানের শাসকদের উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে। ইরানের নেতারা মনে করেন, তাঁদের জাতীয় স্বার্থ (অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, আন্তর্জাতিক বৈধতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রতিপত্তি ও প্রভাব) অর্জনের পথে ওয়াশিংটন সবচেয়ে বড় হুমকি ও বাধা। ইরানের নেতাদের এই ভয় অযৌক্তিক নয়। ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর ইতিহাস দীর্ঘ। ফলে দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্য বৈরিতা সৃষ্টি হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে ঘরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ইরানের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিচ্ছে। আমন্ত্রণে কিংবা বিনা আমন্ত্রণে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা রয়েছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ইরান চায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হটিয়ে দিতে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব যাতে কমে আসে, সেই চেষ্টাও করে ইরান। অবশ্য ইরানের উদ্দেশ্য আরও বড়। ইরানের নেতারা মনেপ্রাণে চান, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বৈশ্বিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন ধসে পড়ে। এ উদ্দেশ্যে ইরান–যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা রয়েছে এমন সব রাষ্ট্র এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়। ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পায় এ ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আছে হিজবুল্লাহ, হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ ও হুতি বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত ইয়েমেনের আনসার আল্লাহ। এদের সাহায্যে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক কিংবা ইয়েমেনে তেহরানের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন সরকার গঠন করে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এবং মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাপন্থী দেশ যেমন, ইসরায়েল, জর্ডান, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে চাপে রাখতেও এই কৌশল ব্যবহার করে ইরান।
লেখক মার্কিন সামরিক বিশ্লেষক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct