আপনজন ডেস্ক: বিলকিস বানুর বাড়ি থেকে অদূরে রাস্তার ঠিক পাশে, দিওয়ালির জন্য আতসবাজির পসরা সাজিয়ে চলছে একটি দোকান। দোকানটি রাধেশ্যাম শাহের, যিনি বিলকিস বানুকে ধর্ষণ করেছিলেন আর তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছিলেন। যদিও গুজরাত সরকার শাস্তি মকুব করে দেওয়ায় তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন। তবে বিলকিস বানু এখন আর এখানে থাকেন না। তিনি বিপদ এড়াতে গ্রাম থেকে দূরে ভয়ে বাস করেন। গুজরাতের দাহোদ জেলার রান্ধিকপুর গ্রামে বিলকিস বানুর বাড়ির আশেপাশে অন্যান্য দোষীদের সকলেরই বাড়ি রয়েছে। গ্রামজুড়ে থাকেন ৪,০০০ বাসিন্দা। যদিও ২০২০ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় মুক্তি পাওয়া এগারোজনের অন্যতম গোবিন্দ নাই এনডিটিভিকে বলেছেন, আমরা নির্দোষ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনি কি একজন কাকা এবং ভাইঝিকে একে অপরের সামনে কাউকে ধর্ষণ করতে দেখেছেন? এটা কি হিন্দু সমাজে ঘটে? গোবিন্দ নাইয়ের দাবি, হিন্দুরা এ কাজ করে না।
গোবিন্দ নাই ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিলকিস বানু মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া দুই ব্যক্তিকে হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি জানান এই সপ্তাহের শুরুতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার বাবাও বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কথা বলতে অস্বীকার করেছিলেন। যদিও ২০০২ সালের সেই রাতের পর থেকে বিলকিস বানু আর কখনও গ্রামে থাকতে আসেননি। তার বাড়ি এখন একটি দোকান, যা তার পরিবার একজন হিন্দু মহিলাকে ভাড়া দিয়েছে যিনি কাপড় বিক্রি করেন। বিলকিস বানুর বাড়ির ঠিক সামনেই রয়েছে একটি বহুতল বাড়ি, যেটি ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাধেশ্যাম শাহের। তার ছোট ভাই আশিস শাহ বাড়ির সামনে একটি স্টলে আতসবাজি বিক্রি করছেন। তিনি দাবি করেন, ‘রাধেশ্যাম এখন আর এখানে থাকেন না।
রাধেশ্যাম শাহ এবং আশিস ছাড়াও আরও এক দোষীর নাম প্যারোলে বের হওয়ার সময় এক মহিলাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এফআইআর-এ নাম রয়েছে। আশিস শাহ বলেন, এফআইআরটি ‘ভিত্তিহীন। সেই মামলার অভিযোগকারী, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামের মুসলিম বাসিন্দা সাবেরাবেন আইয়ুব ও পিন্টু ভাই। তাদের অভিযোগের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তবে তারা বলছেন যে তারা এখন ভয়ের মধ্যে বাস করছেন। আর এক আসামি, রাজুভাই সোনি, তার গহনার দোকানে ছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের দেখেই আড়ালে চলে যান। এনডিটিভি সূত্র আরও জানিয়েছে, তারা এমন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানোর অভিযুক্তদের প্রাথমিক মুক্তির অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সাড়া দেননি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। পুলিশ সুপার, যিনি মুক্তির অনুমোদনও দিয়েছিলেন, এনডিটিভির সাংবাদিকের বক্তব্য জানার পরে ফোন কল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩ মার্চ, দাহোদের রান্ধিকপুর গ্রামে তৎকালীন সময়ে ২১ বছর বয়সি পাঁচ মাসের গর্ভবতী বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই সময় তার সঙ্গে ছিল তিন বছর বয়সি মেয়ে। তাদের সামনেই পরিবারের সদস্যদের হত্যা করাও হয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct